প্রিয় দর্শক! ইমাম মাহদীর আত্নপ্রকাশ কবে হবে? এ বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেক যুগেই চলছে নানা রকম ভবিষ্যৎ বাণী। যদিও নির্দিষ্ট সময়টি আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। তারপরও কেবল মাত্র সতর্কতার জন্য ইমাম মাহদীর আগমনের কাছাকাছি সময় ও কিছু আলামত নিয়ে আলোচনা করতে চাই। কারণ, হাদীসের যথার্থতা অথবা সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে কেউ কেউ মনে করেন- কয়েক বছরের মধ্যেই হয়ত ইমাম মাহদীর আগমন হবে। আবার কেউ কেউ মনে করেন- ইমাম মাহদীর আগমন আরো শতশত বছর পরে হবে।
যদিও এর কোনটাই সঠিক নয়। তবে বর্তমানে ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশের কোনো কোনো আলামত কাকতালীয়ভাবে মিলে যাচ্ছে। আবার এখনও কিছু আলামত এখনও বাস্তবায়নের বাকী রয়েছে। তাই এ পরিস্থিতিতে আজ আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই।
১. তুর্কি খিলাফত ধ্বংস :
প্রিয় দর্শক! ইমাম মাহদী আগমনের সময় নিয়ে বেশ কিছু মতামত জানা যায়। যেমন : হযরত আবু কুবাইল রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ১০৪ বছর পর মাহদী এর উপর মানুষ ভিড় করবে। ইবনে লাহইয়া বলেন, উক্ত হিসাবটা আজমী তথা অনারবী হিসাব মতে। আরবী হিসাব মতে নয়। [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ- ৯৬২, আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস : ৮১১]
আমরা সবাই জানি, তুর্কি খিলাফত আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯২৪ সালে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। সুতরাং, ১৯২৪+১০৪ = ২০২৮ সাল। এ হিসেবে ইমাম মাহদীর ২০২৮ সালে আবির্ভাব হওয়ার কথা। কারণ, একমাত্র তুর্কি খিলাফত হলা আজমী বা অনরবী খিলাফত। এছাড়া চার খলিফার খিলাফত বা খিলাফতে রাশিদা, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসীয় খিলাফত, ফাতেমীয় খিলাফত- সবগুলোই আরবদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। তাই আজমী খিলাফত অবসানের ১০৪ বছর পর ইমাম মাাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে তার হাতে বাইআত গ্রহণ করার জন্য মানুষের ভিড়ের কথা বলা হয়েছে।
২. ১৫ ই রমজানের বিকট শব্দ :
হযরত ফিরোজ দায়লামি বর্ণনা করেন, কোনো এক রমজানে আওয়াজ আসবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের শুরুতে? নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে আর সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে। [মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৭/৩১০]
সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৫ ই রমজান শুক্রবার হয়, ১৪৪৯ হিজরী বা ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৮ সাল।
৩. রমজান মাস শুরু হবে শুক্রবারে :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে বর্নিত। তিনি বলেন, কোন এক রমজানে অনেক ভূমিকম্প হবে। যে বছর শুক্রবার রাতে রমজান মাস শুরু হয়। তারপর মধ্য রমজানে ফজরের নামাজের পর আকাশ থেকে বিকট শব্দে আওয়াজ আসবে। তখন তোমরা সবাই ঘরের দরজা, জানালা সব বন্ধ করে রাখবে। আর সবাই সোবহানাল কুদ্দুস, সোবহানাল কুদ্দুস, রাব্বুনাল কুদ্দুস তেলাওয়াত করবে। [আল ফিতান, নুয়াইম বিন হাম্মাদ]
সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১ রমজান শুক্রবার ১৪৪৯ হিজরী বা, ২৮ জানুয়ারি ২০২৮ সাল হয়।
৪. আশুরা বা ১০ মুহাররম শনিবার হবে :
ইমাম বাকির রহ. বলেন, যদি দেখ আশুরার দিন বা ১০ মুহাররম শনিবার হয়, ইমাম কায়িম অর্থাৎ মাহদী মাকামে ইব্রাহিম ও কাবার মধ্যখানে দাড়িয়ে থাকেন তখন হযরত জিব্রাইল আ. তার পাশেই দাড়িয়ে থাকবেন এবং মানুষকে ডাকবেন তাকে বাইয়াত দেয়ার জন্য। [বিহারুল আনোয়ার, ৫২/২৭০]
সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ মুহাররম শনিবার ১৪৫০ হিজরী বা ৩ জুন ২০২৮ সাল হয়।
৫. জিব্রাইল আ. এর আহ্বান :
হযরত আবু বাছির রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ আস সাদিক অর্থাৎ হযরত জাফর সাদিক রহ.কে জিজ্ঞেস করলাম- কখন আল কায়েম তথা ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে? তিনি বললেন- আহলে বাইত তথা রাসূলুল্লাহ সা. এর বংশধরের জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ নেই।
তবে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে ৫টি বিষয় ঘটবে। যেমন : ১. আকাশ থেকে আহ্বান ভেসে আসবে, ২. সুফিয়ানীর উত্থান হবে, ৩. খোরাসানের বাহিনীর আত্নপ্রকাশ হবে, ৪. নিরপরাধ মানুষকে ব্যাপকহারে হত্যা করা হবে এবং ৫. (বাইদার প্রান্তে) মরুভূমিতে একটি বিশাল বাহিনী ধ্বংসে যাবে।
ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা যাবে : ১. শ্বেত মৃত্যু এবং ২. লাল মৃত্যু। শ্বেত মৃত্যু হলো দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যু যা মহান মৃত্যু। আর লাল মৃত্যু হলো তরবারি বা যুদ্ধের কারণে মৃত্যু। আর আকাশ থেকে হযরত জিব্রাইল আ. ইমাম মাহদীর নাম ধরে আহ্বান করবেন ২৩ ই রমজান শুক্রবার রাতে। [বিহারুল আনোয়ার, ৫২/১১৯]
সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২২ রমজান শুক্রবার। কিন্তু যেহেতু আরবী মাস সন্ধ্যা থেকে হিসাব করতে হয়, তাই শুক্রবার রাত ২৩ ই রমজান হবে ১৪৪৯ হিজরী বা ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৮ সাল।
৬. চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ :
মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আল হানাফিয়্যাহ রহ. বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবী থেকে দু’টি বিষয় না ঘটবে ততদিন পর্যন্ত মাহদী আগমন হবে না। প্রথমটি হলো : রমজানের প্রথম রাতে চন্দ্র গ্রহণ আর দ্বিতীয়টি হলো : মধ্য রমজানে সূর্য গ্রহণ। [ইবনে হাজার আল হাইতামী : আল-কাউলুল মুখতাসার ফি আলামাতিল মাহদী আল-মুন্তাজার, ৪৭]
১ রমজান রবিবার ১৪৪৮ হিজরী বা ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৭ সালে সূর্য গ্রহন ঘটবে। এবং ১৪ রমজান শনিবার ১৪৪৮ হিজরী বা ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৭ চন্দ্র গ্রহণ ঘটবে। [ডরশরঢ়বফরধ ্ ঘঅঝঅ বিনংরঃব]
এখানে আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০২৬ সালেও রমজান মাসে দুই বার চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ হবে।
৭. আবু হুরায়রা রা. এর উক্তি :
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, ১৪০০ হিজরীর পর ২ দশক বা ৩ দশক পর ইমাম মাহদীর আগমন হবে। [কালদা বিন জায়েদ, আসমাউল মাসালিক লিইয়াম মাহদিয়্যাহ মাসালিক লি কুল্লিদ দুনিইয়া বি আমরিল্লাহীল মালিক, ২১৬]
সুতরাং ১৪০০+২ দশক বা ২০ বছর+৩ দশক বা ৩০ বছর=১৪৫০ হিজরী বা ২০২৮ সাল।
৮. শাহ নিয়ামত উল্লাহ এর কাসিদাহ :
শাহ নিয়ামত উল্লাহ এর কাসিদাহ মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভবিষ্যৎবাণী করা একটি কবিতা। কাসিদাহ লেখা হয়েছে ১১৫৮ সালে। কাসিদাহ এর ৫৭ নং প্যারায় বলা হয়েছে : ‘‘কানা জাহুকার’’ প্রকাশ ঘটার সালেই প্রতিশ্রুত ইমাম মাহাদি দুনিয়ার বুকে হবেন আবির্ভূত।
‘‘কানা জাহুকা (كَانَ زَهُوقًا)’’ শব্দটি পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা বনি ঈসরাইলের ৮১ নং আয়াতে রয়েছে আর উপমহাদেশ তথা ভারত ও পাকিস্তান নামে ভাগ হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। সুতরাং ১৯৪৭+৮১=২০২৮ সাল।
৯. সুফিয়ানীর জন্ম ও উত্থান :
হযরত যুহরী রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন দ্বিতীয় সুফিয়ানীর জন্মের সময় আকাশে আলামত বা নিদর্শন দেখা যাবে। [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ : ৯৫৪]
১৯৮৬ সালের ৮মার্চ আকাশে হেলির ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল। সাধারণত প্রতি ৭৪ থেকে ৭৯ বছর পর পর হেলির ধূমকেতু পৃথিবীতে দৃশ্যমান হয়। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, যে বছর হেলির ধূমকেতু দৃশ্যমান হয় সে বছর একটা বিখ্যাত ঘটনা ঘটে।
হযরত হুজায়ফা রা. সূত্রে বর্ণিত। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন খুযায়ী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা এই সুফিয়ানিকে কিভাবে চিনব? উত্তরে রাসুল সা. বললেন, তার গাঁয়ে দুটি কাতওয়ানির চাদর থাকবে। অর্থাৎ এটা দ্বারা দুটি শক্তিশালী দল বোঝানো হয়েছে। তার চেহারার রং ঝলমলে তারকার মতো হবে। ডান গালে তিলক থাকবে। আর বয়স চল্লিশের কম হবে। [আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, ৫/১১০]
সুতরাং ১৯৮৬+৪০ =২০২৬ সাল। অর্থাৎ ২০২৬ সালের পূর্বেই সুফিয়ানীর উত্থান হবে।
১০. ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় ভেসে উঠা :
সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, চতূর্থ ফিৎনা হচ্ছে অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ণ ফিৎনা। যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে আসবে, আরব অনারবের কোনো ঘর বাকি থাকবে না, প্রত্যেক ঘরেই উক্ত ফিৎনা প্রবেশ করবে। যা দ্বারা তারা লাঞ্ছিত অপদস্ত হয়ে যাবে। যে ফিৎনাটি শাম তথা সিরিয়া দেশে চক্কর দিতে থাকলেও রাত্রি যাপন করবে ইরাকে। তার হাত পা দ্বারা আরব ভুখন্ডের ভিতরে বিচরন করতে থাকবে।
উক্ত ফিৎনা এ উম্মতের সাথে চামড়ার সাথে চামড়া মিশ্রিত হওয়ার ন্যায় মিশ্রিত হয়ে যাবে। তখন বালা মুসিবত এত ব্যাপক ও মারাত্মক আকার ধারন করবে যা দ্বারা মানুষ ভালো খারাপ কিছুই নির্ণয় করতে সক্ষম হবে না। ঐ মুহুর্তে কেউ উক্ত ফিৎনা থামানোর সাহসও রাখবে না।
একদিকে একটু শান্তির সুবাতাস বইলেও অন্যদিকে তীব্র আকার ধারন করবে। মানুষ সকালে বেলা মুসলমান থাকলেও সন্ধ্যা হতে হতে সে কাফের হয়ে যাবে। উক্ত ফিৎনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না কিন্তু ঐ লোক বাঁচতে পারে, যে সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায়। করুন সুরে আকুতি জানাতে থাকে।
সেটা প্রায় ১২ বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। এক পর্যায়ে সকলের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে ফোরাত নদীতে স্বর্নের একটি পাহাড় প্রকাশ পাবে। যা দখল করার জন্য সকলে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এবং প্রতি নয় জনের সাতজন মারা পড়বে। [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ : ৬৭৬]
অনেকের মতে চতুর্থ ফিতনা হলো সিরিয়ার যুদ্ধ। যা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। সেটা ১২ বছর স্থায়ী থাকবে, তারপর ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় ভেসে উঠবে। সুতরাং ২০১১+১২=২০২৩ সাল।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন- ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় দখলকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের পরপরই ইরাকের কুফা তথা মসূল নগরীতে কালো পতাকাবাহী দলের উপর গনহত্যা সংগঠিত হবে। তারপরই খোরাসানের কালো পতাকাবাহী বাহিনীর আত্নপ্রকাশ হবে।
হযরত ইবনুল হানাফিয়্যাহ রহ. থেকে বর্নিত। খোরাসান থেকে কালো ঝান্ডাবাহী দল এবং শুয়াইব ইবনে সালেহ ও ইমাম মাহদী এর আত্মপ্রকাশ এবং ইমামা মাহদী এর হাতে ক্ষমতা আসা বাহাত্তর মাস বা ৬ বছরের মধ্যেই সংঘটিত হবে। [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ : ৮০৪]
সুতরাং, ইমাম মাহদীর হাতে খিলাফতের ক্ষমতা যাবে ২০২৩+৬= ২০২৯ সাল। অর্থাৎ ২০২৯ সালের পূর্বেই মাহদীর হাতে রাজত্ব যাবে।
১১. পবিত্র কাবা শরীফে হত্যাকাণ্ড :
১৪০০ হিজরীতে ইমাম মাহদীকে কেন্দ্র করে লোকজন জড়ো হবে। [রিসালাত আল খুরুজ আল মাহদী, ১০৮] অর্থাৎ ১৪০০ হিজরী বা ১৯৭৯ সাল। ১৯৭৯ সালে হজ্জের সময় জুহাইমান আল-কুতাইবি নামে এক ব্যক্তি তার শ্যালক কে ইমাম মাহদী হিসাবে পরিচিত করে পবিত্র কাবা শরীফ ১৫ দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। তারপর পাকিস্তান ও ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদেরকে হত্যা করা হয়। [সূত্র: ডরশরঢ়বফরধ]
হযরত তাবে রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আশ্রয়প্রাথী আচিরেই মক্কার নিকট আশ্রয় চাইবে। কিন্তু তাকে হত্যা করে দেওয়া হবে। অতপর মানুষ তাদের যুগের কিছু কাল বসবাস করবে। অতপর আরেকজন আশ্রয় চাইবে। যদি তুমি তাকে পাও তাহলে তোমরা তাকে আক্রমন করিও না। কেননা সে ধসনেওয়ালা সৈন্যদলের একজন সৈন্য। অর্থাৎ যারাই তাকে আক্রমণ করতে যাবে, তারাই মাটির নিচে ধ্বংসে যাবে। [আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ : ৯৩৫ ]
এখানে যুগের কিছু কাল বলতে ৩৩ থেকে ৪০ বছর বা তার বেশি কিছু সময় উদ্দেশ্য। সুতরাং ১৯৭৯+৪০= ২০১৯+আরো কিছু সময়। অর্থাৎ ২০২৮ সাল।
প্রিয় দর্শক! এতক্ষণ ধরে যে সূত্রগুলোর উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত ‘‘জঈফ’’ বা দুর্বল। অথবা শিয়া বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল। আবার কোনোটা জঈফ না হলেও তার ভিত্তিতে যেভাবে হিসেব-নিকেশ করা হয়েছে বা যেভাবে অঙ্ক কষে ২০২৮ সাল নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে তা মনগড়া বলে মনে হয়। এগুলোর আলোকে অনেকে ইমাম মাহদী আগমনের সম্ভাব্য সময়কাল নির্ধারণের চেষ্টা করেন। একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেন। তবে এ সব চেষ্টা সাম্প্রতিক বা একে বারে নতুন কিছু নয়। বরং যুগে যুগে অনেকেই এসব চেষ্টা চালিয়েছেন।
ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, রাসূলে করীম সা. এর ইন্তেকালের পর এ পৃথিবীতে ইমাম মাহদী হওয়ার দাবীদার বহুলোকের আবির্ভাব ঘটেছে এবং ঘটছে। প্রকৃত মাহদীর আত্মপ্রকাশের পূর্বে বহুলোক মিথ্যা মাহদী সেজে মানুষের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করছে। যার মধ্যে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, সিরিয়ার এক বিভ্রান্ত যুবক, বাংলাদেশের এক লোক, দক্ষিণ ইয়েমেনের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী, ইরানের একজন শিয়া নেতা এবং ১৪০০ হিজরীর শুভলগ্নে পবিত্র কাবা গৃহ দখলকারী এক মোহাম্মদ নামধারী যুবক মাহদী রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
কিন্তু তাদের কারোরই পরিণাম সুখের হয় নাই। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী পায়খানায় পড়ে প্রাণ হারায়। সিরিয়ার বিভ্রান্ত যুবকটিকে বিষাক্ত বিচ্ছু কামড়িয়ে হত্যা করে। বাংলাদেশের লোকটি পেশাব পায়খানা চাটতে চাটতে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। বস্ত্র ব্যবাসায়ীটি বন্য কুকুরের আক্রমনে মারা যায়। শিয়া নেতা গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে শোনা যায়। অনুরূপভাবে ভন্ড নবী দাবীদারগণের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ ও মর্মন্তুদ হয়েছিল।
আসলে, ইমাম মাহদী অর্থাৎ একজন সত্য-ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসক কিয়ামতের পূর্বে আগমন করবেন। এটা অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা বোঝা যায়। তবে ঠিক কখন তিনি আগমন করবেন- এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কত সাল তারিখ জানা জায় না। বরং তিনি কিয়ামতের পূর্বে আখিরি যামানায় আসবেন- এটাই কেবল জানা যায়। আর কিয়ামতের সময় প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন :
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ .
‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে- কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন- এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন- নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে- অজান্তেই এসে যাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না।’ [সূরা আরাফ, ৭: ১৮৭]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে ইমাম মাহদী বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে হিফাজত করুন, আমীন!