1. islamandlifestudio@gmail.com : islamandlife :
  2. saif17rfl@gmail.com : Muhammad Saifullah : Muhammad Saifullah
মৃত্যুর সময় রূহ নাকি নাফস কোনটি চিরতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়? রূহ ও নাফস এর পরিচয় - Islam and Life
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:৫১ অপরাহ্ন

মৃত্যুর সময় রূহ নাকি নাফস কোনটি চিরতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়? রূহ ও নাফস এর পরিচয়

মুহাঃ উবায়দুল্লাহ
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩
নফসের পরিচয় :

নাফস শব্দের  অর্থ হলো আত্মা বা মণ।

নফস বা আত্মা হলো আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ সৃষ্টি, যা পৃথিবীতে মানব দেহকে কেন্দ্র করে অবস্থান করে। এটা মানুষের কর্মকান্ডের সকল পরিকল্পনা তৈরি করে এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে কাজ সমাধা করে এবং অনুভূতি তৈরি করে। নফস বা আত্মা মৃত্যুবরণ করে এবং মৃত্যুর পর এর হিসাব-নিকাশ করা হয়। অর্থাৎ আল-কুরআনের ভাষায়-

ক. নফস হলো আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ সৃষ্টি, যার মাধ্যমে মানুষের গঠনকে পরিপূর্ণ করা হয়েছে এবং তাকে ভালো ও মন্দের জ্ঞান দান করা হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন :

وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا ‎﴿٧﴾‏ فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا ‎

‘নফসের শপথ! যাকে তিনি বিন্যস্ত করেছেন। অতপর তাকে অসৎ ও সৎ কর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দান করা হয়েছে।’ [সূরা শামস, ৯১: ৭-৮]

খ. নফস ই ভালো বা মন্দ কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন :

قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا ۖ

‘(ইউসুফ আ.) বললেন : বরং তোমাদের নফসই তোমাদের জন্য এ পরিকল্পনা সাজিয়ে দিয়েছে।’ [সূরা ইউসুফ, ১২: ৮৩]

গ. নফসই মানুষকে সৎ বা অসৎ কাজের আদেশ করে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন :

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ

‘নিশ্চয় নফস অধিক পরিমাণে মন্দ কাজের আদেশ করে।’ [সূরা ইউসুফ, ১২: ৫৩]

ঘ. প্রতিটি নফসই মরণশীল। আল্লাহ তায়ালা বলেন :

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ

‘প্রতিটি নফসকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ [সূরা আম্বিয়া, ২১: ৩৫]

ঙ. মৃত্যুর পর আখিরাতের জীবনে নফসের ভালো বা মন্দ কর্মের হিসাব নেওয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন :

يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوءٍ

‘সেদিন প্রত্যেক নফস যা কিছু ভাল কাজ করেছে; চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ করেছে তাও (চোখের সামনে দেখতে পাবে)।’ [সূরা আলে ইমরান, ৩: ৩০]

ওপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায় যে, জীবিত মানুষ মূলত জিসম বা দেহ এবং নফস বা আত্মার সমন্বয়ে গঠিত হয়। এ কারণে কুরআনুল কারীমে মানুষকে “নফস” বলে সম্বোধন করা হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন :

كُلُّ نَفۡسِۢ بِمَا كَسَبَتۡ رَهِينَةٌ٣٨

‘প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ অর্জনের কারণে দায়বদ্ধ।’ [সূরা মুদ্দাসসির : ৩৮]

·         নফসের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ :

একজন মানুষের মধ্যে একটিমাত্র নফস ই থাকে, একাধিক নফস থাকে না তবে সেই একক নফসের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। আল-কুরআনে বর্ণিত নফসের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো  নিম্নরুপ :

ক. (نفس الاماره) নাফছে আম্মারা :

মন্দপ্রবণ হওয়া :

সৃষ্টিগতভাবে নফস সাধারণত মন্দপ্রবণ হয়ে থাকে এবং মানুষকে অধিক পরিমানে মন্দ কাজের আদেশ করে। তবে আল্লাহর রহমতে কোনো কোনো নফস মন্দ কাজের পরিকল্পনা বা আদেশ প্রদান করা থেকে বিরত থাকে। নফসের মন্দপ্রবণতা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ

‘নিশ্চয় নফস অধিক পরিমাণে মন্দ কাজের আদেশ করে। তবে (সেই নফস) নয়, যার প্রতি আমার পালনকর্তা রহম করেন।’ [সূরা ইউসুফ, ১২: ৫৩]

এ ধরনের নফসকে দর্শন শাস্ত্রের ভাষায় কুপ্রবৃত্তি বলা হয়। আবার অনেকে একে নফসে আম্মারাও বলে থাকেন।

খ.   (النَّفْس اللَّوَّامَة) নফসে লাওয়ামা বা আত্ম-ভর্ৎসনা করা :

আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত নফস আত্ম-ভর্ৎসনা করে, যাকে আল-কুরআনে নফসে লাওয়ামা (النَّفْس اللَّوَّامَة) বলা হয়েছে।  লাওয়াম শব্দের অর্থ হলো নিজেই নিজের তিরস্কার বা  ভর্ৎসনাকারী। সুতরাং নফসে লাওয়ামা মানে হলো আত্ম-ভর্ৎসনাকারী   নফস বা আত্মা। নফসে লাওয়ামা মানুষকে সৎ ও উচিত কাজের আদেশ করে এবং অসৎ ও অনুচিত কাজের জন্য  ভর্ৎসনা করে বা ধিক্কার জানায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ ধরনের নফসের নামে শপথ গ্রহণ করে বলেন :

لَا أُقْسِمُ بِيَوْمِ الْقِيَامَةِ ‎﴿١﴾‏ وَلَا أُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ ‎﴿٢﴾‏

‘আমি শপথ করি কিয়ামত দিবসের। আরো শপথ করি সেই নফস বা আত্মার যে নিজেকে ধিক্কার দেয়।’ [সূরা কিয়ামাহ্, ৭৫: ১-২]

দর্শন শাস্ত্রের ভাষায় আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন এ ধরনের আদর্শ আত্মাকে আনা (أنا), অহম বা ইগো বলা হয়।

গ. (النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ) নফসে মুতমাইন্না

বা প্রশান্ত বা ধীরস্থির থাকা আত্মা :

আল্লাহর বিশেষ রহমত প্রাপ্ত নফস প্রশান্ত ও ধীরস্থির হয়ে থাকে, যাকে আল-কুরআনে নফসে মুতমাইন্না (النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ) বলা হয়েছে। মুতমাইন্না শব্দের অর্থ হলো প্রশান্ত বা স্থির। সুতরাং নফসে মুতমাইন্না মানে হলো প্রশান্ত, স্থির বা প্রশান্ত আত্মা। নফসে মুতমাইন্না সুখ-শান্তি ও বিপদ-আপদ সর্ব অবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, ধীরস্থির ও প্রশান্ত থাকে এবং সৎ, উচিত ও মর্যাদা সম্পন্ন কাজের প্রতি ধাবিত হয়। মৃত্যুকালে এ ধরনের আত্মাকে স্বাগত জানিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ‎﴿٢٧﴾‏ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً ‎﴿٢٨﴾

‘হে প্রশান্ত আত্মা! সন্তুষ্ট চিত্তে তোমার রবের নিকট সন্তোষভাজন হিসেবে ফিরে এসো।’ [সূরা ফজর, ৮৯: ২৭-২৮]

নবী-রাসূলদের আত্মা এ পর্যায়ে উন্নীত আত্মা, তাই তাঁরা নিঃপাপ হয়ে থাকেন। তবে আল্লাহর রহমতে সাধারণ মানুষের আত্মাও এ পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে। দর্শন শাস্ত্রের ভাষায় এ ধরনের মহান আত্মাকে আনাল আ’লা (أنا الأعلى) বা সর্বোচ্চ আত্মা বলা হয়।

ওপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, নফস স্বভাবগতভাবে মন্দ প্রবণ হয়ে থাকে। তবে আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত কিছু কিছু নফস আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন এবং ধীরস্থির ও প্রশান্ত হয়ে থাকে।

প্রিয় দর্শক! এতক্ষণ আমরা নফস নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার আমরা রূহ নিয়ে আলোচনা করবো।

৩. রূহের পরিচয় :

আমাদের ভাষায় আমরা রুহকে প্রাণ বলে থাকি।  রুহ বা প্রাণ হলো জীবনী শক্তির নাম।  কিন্তু আরবী ভাষায়

রুহ শব্দের  শাব্দিক অর্থ হল আমর বা আদেশ। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :

‎وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ ۖ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا

তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। ( আপনি ) বলে দিনঃ রূহ হচ্ছে  আমার  পালনকর্তার আদেশ বিশেষ। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। সূরা ইসরা : ৮৫

আমরা জানি যে,

সমস্ত সৃষ্টি জগত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিয়ন্রনাধীন  এবং তাঁরই আদেশ ও নির্দেশনা অনুসারে পরিচালিত হয়। ফলে সমস্ত সৃষ্টি জগতের ওপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একটি “আমর “ বা  আদেশ তথা নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এই আমরের একটি “কুল্লী” বা সামগ্রীক রূপ যেমন আছে, তেমনি একটি “জুয্ঈ”, পার্সোনাল বা নির্দিষ্ট রূপও আছে।

মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টির ওপর আল্লাহ তায়ালার যে নিয়ন্ত্রণ, তাকে সামগ্রীকভাবে “আমরে কুল্লী” বা সামুষ্টিক আমর বলা হয়। আসমান-যমীন ও সমগ্র মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টির ওপর আল্লাহ তায়ালার এই আমরে কুল্লী সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে :

ۗ      أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ

‘জেনে রেখো! সৃষ্টি এবং নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র তাঁরই (আওতাধীন)।’ [সূরা আরাফ, ৭: ৫৪]

প্রতিটি ব্যক্তি, বস্তু বা পদার্থের ওপর আল্লাহ তায়ালার যে নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ, তাকে নির্দিষ্টভাবে “আমরে জুয্ঈ” বা নির্দিষ্ট আমর বলা হয়। ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্দিষ্ট আমর প্রয়োগ করার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

رَفِيعُ الدَّرَجَاتِ ذُو الْعَرْشِ يُلْقِي الرُّوحَ مِنْ أَمْرِهِ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ

‘সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক। তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে যার ওপর ইচ্ছা নিজ আমর হতে রূহ প্রেরণ করেন।’ [সূরা গাফির, ৪০: ১৫]

সুতরাং বোঝাগেল যে, আমরে কুল্লী বা সামুষ্টিক আমরের অংশ হিসেবে ব্যক্তি বিশেষের ওপর আল্লাহ তায়ালা যে আংশিক আমর প্রয়োগ করেন, সেটাকে নির্দিষ্টভাবে রূহ বলা হয়। যেমন: সূরা ইসরায় আল্লাহ তায়ালা বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে বলেন :

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ ۖ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا

‘তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন : রূহ হলো আমার রবের ( আদেশ ) বা “আমরের” অংশ বিশেষ। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই কেবল দেওয়া হয়েছে।’ [সূরা ইসরা, ১৭: ৮]

এভাবে আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমের যত যায়গায় কোনো সম্বন্ধ ব্যতীত এককভাবে রূহের কথা উল্লেখ করেছেন, সবখানে রূহকে তাঁর “আমরের” অংশ বিশেষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন: সূরা শুরার ৫২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন :

وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِّنْ أَمْرِنَا ۚ

‘এ ভাবেই আমি আপনার নিকট আমার “আমর” হতে রূহ প্রেরণ করেছি।’ [সূরা শুরা, ৪২: ৫২]

সুতরাং বলা যায় যে, রূহ হলো আল্লাহ তায়ালার “আমরে কুল্লি” বা সামুষ্টিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার অংশ বিশেষ, যা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর কার্যকর অবস্থায় বিরাজ করে।

রূহ বিষয়ে মানুষের জ্ঞান যেহেতু অত্যন্ত কম, তাই মানবীয় সীমাবদ্ধতার কারণে বিষয়টি বোঝা অত্যন্ত জটিল। তবে কিছুটা সহজে বোঝার জন্য মোবাইল ফোনের “নেটওয়ার্কের” কথা চিন্তা করা যায়।

একটি মোবাইল সেটের কথা ভাবুন। উদাহারণ হিসেবে মোবাইল সেট কে আমরা যদি “জাসাদ” বা দেহ হিসাবে কল্পনা করি,যার মধ্যে হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার সবই ঠিক আছে। অর্থাৎ মোবাইল সেটটিতে নেটওয়ার্ক আইসি আছে, যা হার্ডওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত; নেটওয়ার্ক রিডার আছে, যা সফ্টওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত। আবার সেটটিতে পর্যাপ্ত চার্জও আছে।

এ অবস্থায় সেটটি যদি “এরিয়া নেটওয়ার্ক” এবং “লোকাল নেটওয়ার্কের” সাথে যুক্ত না হতে পারে, তাহলে কি সেটটি দিয়ে কল আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে?

নিশ্চয় সম্ভব হবে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে হার্ডওয়্যার, সফ্টওয়্যার এবং পর্যাপ্ত চার্জ থাকা সত্ত্বেও সেটটি দিয়ে কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। বরং যোগাযোগের জন্য সেটটিকে এরিয়া নেটওয়ার্কের সাথে যেমন সংযুক্ত থাকতে হবে, তেমনি লোকাল নেটওয়ার্কের সাথেও সংযুক্ত থাকতে হবে।

মানুষের জিসম এবং নফসের সাথে রূহের সম্পর্কটিও নেটওয়ার্কের মত। মানব দেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং তাতে নফস থাকলে এ মানুষকে গঠনগত দিক থেকে পূর্ণাঙ্গ বলা যায়। তবে কার্যকর বা যোগাযোগ সক্ষম বলা যায় না। বরং এ পূর্ণাঙ্গ দেহে যখন রূহের সংযোগ দেওয়া হয়, তখনই কেবল জিসম কার্যকর হয়ে উঠে। আল্লাহ তায়ালা সূরা সদে এ কথাটাই এভাবে বলেছেন :

إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ ‎﴿٧١﴾‏ فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ ‎﴿٧٢﴾‏

‘আমি কাদা মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব। যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মুখে সেজদায় নত হয়ে যেয়ো।’ [সূরা সদ, ৩৮: ৭১]

অর্থাৎ আদম আ. এর দেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং তাতে নফস দেওয়ার মাধ্যমে যখন তাকে পূর্ণাঙ্গ করা হলো এবং সেই পূর্ণাঙ্গ দেহে রূহের সংযোগ দেওয়া হলো, তখন নিতান্ত সাধারণ মাটির তুচ্ছ সৃষ্টি মুহুর্তেই কার্যকর হয়ে উঠলো। এ ঘটনায় ফেরেশতারা অবাক বিষ্ময়ে অভিভূত হয়েগেল এবং তৎক্ষণাৎ মাথা নত করে ফেললো।

এক কথায় আমরা বলতে পারি যে, মোবাইল সেটটি হলো “জিসিম” বা বডি এবং তার ভিতরে হার্ডওয়ার সফটওয়্যার এবং চার্জ শক্তি টি হল “নাফছ” এবং তার সাথে নেটওয়ার্ক টি হলো “রুহ” । এই তিনের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি জীবন্ত মানুষ।

ওপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে,

·         সমগ্র সৃষ্টি জগতকে এক্টিভ ও পরষ্পরে যোগাযোগ সক্ষম করার জন্য আল্লাহ তায়ালার এক সামগ্রীক কুদরত কার্যকর রয়েছে এবং রূহ হলো সেই সামগ্রীক কুদরতের অংশ বিশেষ। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের মধ্যে রূহের সংযোগ দেওয়া না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ যোগাযোগ উপযোগী হতে পারে না।

·         মানুষের শরীরে রূহের সিগন্যাল ধারণের উপযোগী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। যেমন: হৃদপিন্ড ও মস্তিষ্ক হলো প্রধান দু’টি সিগন্যাল ধারণের উপযোগী অঙ্গ। এ কারণে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তির হৃদপিন্ড বা মস্তিষ্কে আঘাত করলে সে মারা যায়। অথচ হাত বা পা কেটে ফেললে মারা যায় না।

প্রিয় দর্শক! এতক্ষণ আমরা রূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার আমরা নফস ও রূহ সম্পর্কীত একটি সম্পূরক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

·         ঘুম ও মৃত্যুর সময় নফস ও আত্মার মধ্য হতে কোনটি চলে যায়?

ঘুম এবং মৃত্যুর সময় মানুষের শরীর থেকে নফস চলে যায় নাকি রূহ চলে যায়, এ বিষয়ে বিভিন্ন রকম মতামত পাওয়া যায়। তবে সঠিক তথ্য প্রদান করে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا ۖ فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ

‘আল্লাহ মানুষের নফসগুলোকে মৃত্যুর সময় হরণ করে নেন, আর যারা মৃত্যু বরণ করে না (তাদের নফসগুলোকে) ঘুমের সময় (হরণ করে নেন)। অতপর যাদের মৃত্যু অবধারিত হয়েগেছে, (তাদের নফসগুলোকে) তিনি রেখে দেন এবং অন্যদের (নফসগুলোকে) নির্দিস্ট সময়ের জন্য ফেরৎ পাঠান।’ [সূরা যুমার, ৩৯: ৪২]

ওপরোক্ত আয়াত থেকে বোঝা যায়, ঘুম ও মৃত্যু- উভয় অবস্থায় জিসম থেকে নফস পৃথক হয়ে যায়। তবে পার্থক্য হলো :

·         ঘুমের সময় জিসম থেকে একটি বিষয় পৃথক হয়ে যায় আরেকটি বিষয় পৃথক হয় না। নফস সাময়ীক সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং রূহ সংযুক্ত থাকে। ফলে রূহের সংযোগ অবশিষ্ট থাকায় এ সময় মানুষ নানা রকম মানবীয় অনুভূতি টের পায়, তবে নফস না থাকায় জাগ্রত মানুষের মত সাড়া দিতে পারে না।

·         আর মৃত্যুর সময় জিসম থেকে দু’টি বিষয়ই বা নফস ও রূহ- উভয়টি পৃথক হয়ে যায়। জিসম ছেড়ে নফস চিরতরে চলে যায় এবং আর কখনো তা ফিরে আসে না। রূহের সংযোগও চিরকালের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে বায়োলজিকাল ডেথ (biological death) অর্থাৎ অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মানুষ আর কখনো কোনো মানবীয় অনুভূতি টের পায় না, কোনো কিছুর প্রতি সাড়া দিতে পারে না এবং কারো সাথে যোগাযোগও করতে পারে না।

আল্লাহর আদেশে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জীবন যাপন করার পর, যখন নফস বা আত্মাকে চূড়ান্তরূপে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং আল্লাহ তায়ালা রূহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি জগতের সাথে মানুষের যোগাযোগের সকল রাস্তা বন্ধ করে দেন, মানুষ তখন বড়ই অসহায় হয়ে যায়। জিসম ও রূহ বিহীন সেই নফসের জগতে আল্লাহর রহমত ছাড়া মানুষের আর কোনো উপায়ই থাকে না।

তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে তাঁর দীনের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া, তাঁর সন্তোষভাজন ও প্রিয় বান্দা হওয়া এবং আত্মসংশোধনের মাধ্যমে নফসে মুতমাইন্না অর্জন করার তাওফিক দান করুন, যে নফসকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে তিনি ঘোষণা করেন :

يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ‎﴿٢٧﴾‏ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً ‎﴿٢٨﴾

‘হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার রবের নিকট ফিরে এসো- সন্তুষ্ট চিত্তে, সন্তোষভাজন হিসেবে।’ [সূরা ফজর, ৮৯: ২৭-২৮]

More News Of This Category

আজকের সময় ও তারিখ

এখন সময়ঃ দুপুর ১২:৫১

আজঃ বুধবার,

বর্ষাকাল

১৯ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি


© All rights reserved © 2023 ISLAM AND LIFE
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ubaidullah

You cannot copy content of this page