1. islamandlifestudio@gmail.com : islamandlife :
  2. saif17rfl@gmail.com : Muhammad Saifullah : Muhammad Saifullah
শয়তানের সাথে লড়াই করে কিভাবে জান্নাত জয় করবেন ? - Islam and Life
বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

শয়তানের সাথে লড়াই করে কিভাবে জান্নাত জয় করবেন ?

মুহাঃ উবায়দুল্লাহ
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩

প্রিয় দর্শক ও শ্রোতামন্ডলী, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আজকে আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আর সে বিষয়টি হল:  কিভাবে শয়তানের সাথে লড়াই করে আপনি জান্নাত জয় করবেন ?

বাস্তবে মানুষের পুরো জীবনটাই হলো একটি যুদ্ধ ক্ষেত্র। মানুষ তাঁর  জন্মের পর থেকেই যুদ্ধ করে চলেছে।  অর্থাৎ তার জীবনের প্রতিটি পদে পদে যুদ্ধ, এই যুদ্ধ বা সংগ্রাম করেই তাকে বেঁচে থাকতে হয়।
তাই একজন মুমিনের জীবনও এর থেকে আলাদা নয়। একজন মুমিন তার প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, এভাবেই যুদ্ধ করেই তাকে দ্বীনের পথে টিকে থাকতে হবে। কেননা শয়তান হচ্ছে তার চির শত্রু ।

একজন মানুষ যখন বালেগ হয় তারপর থেকে শয়তানের সাথে তার যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। শয়তান তাকে বিপথগামী করার জন্যে, আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্যে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
অতঃপর তাদের মধ্যে চূড়ান্ত কোন ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। কারণ শয়তান হচ্ছে মানুষের চিরশত্রু।
শয়তান মানুষকে বিপথগামী করার জন্য  আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে চ্যালেঞ্জ করেছে।

এই বর্ণনাটা পবিত্র আল-কোরআন সুন্দরভাবে উল্লেখ করেছে ।যেমন আল কুরআনে এরশাদ হচ্ছে :
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ
ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ
শয়তান বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না। সূরা আরাফ :  ১৬-১৭

তাহলে উক্ত আয়াত থেকে এ কথাই প্রতিমান হয় যে,
যতদিন আপনি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন এক মুহুর্তের জন্যও  শয়তানের সাথে আপনার এই যুদ্ধ থামবে না।
কখনও শয়তান আপনাকে এই যুদ্ধে হারিয়ে দিবে। শয়তান আপনাকে হারিয়ে দিয়ে আপনার বুকে চেপে বসবে এবং সে উল্লাস প্রকাশ করবে।
কখনো আপনিও শয়তানকে শুন্যে তুলে নিয়ে মাটিতে আচার দিবেন, আপনিও তার বুকে চড়ে বসবেন, আপনি তার উপর বিজয় লাভ করবেন।
আপনি কখন বুঝবেন যে, শয়তান আপনাকে হারিয়ে দিয়েছে, আপনাকে মাটিতে ফেলে দিয়েছে , আপনার বুকে চড়ে বসেছে ? যখনই আপনি কোন গুনাহ এ  লিপ্ত হবেন। তখনই বুঝবেন যে, শয়তান আপনাকে পরাভূত করেছে।
যখন আপনি এটা বুঝবেন, তখনই আপনি গা ঝারা দিয়ে উঠে দাঁড়াবেন।এবং তৎক্ষনাত  আপনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে “তওবা” করবেন । আর “তাওবা” করার অর্থ হলো ঘুরে দাঁড়ানো। তারপর আপনি ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রস্তুতি নিবেন, শয়তানকে আক্রমণ করার জন্য । শয়তানকে আপনি কিভাবে আক্রমণ করবেন ?

শয়তানকে আক্রমণ করার অর্থ হল আপনি “তওবা” করার পর  “নেক আমল” করবেন। আপনার প্রত্যেকটি নেক আমল শয়তানকে আক্রমণ করা বলে বিবেচিত হবে। এবং সাথে সাথে শয়তান আপনার কাছে পরাজিত হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন :
إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُولَٰئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا

অবশ্য যারা তওবা করে নিয়েছে, নিজেদের অবস্থার সংস্কার করেছে এবং আল্লাহর পথকে একনিষ্ট ও  সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছে, তারা থাকবে মোমেনদেরই সাথে। বস্তুতঃ আল্লাহ শীঘ্রই ঈমানদারগণকে মহাপূণ্য দান করবেন।সূরা নিসা : ১৪৬

উক্ত আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে শুধু “তাওবা” করলেই চলবে না “তওবা” করার সাথে সাথে নিজেকে সংশোধন করতে হবে, নেক আমল করতে হবে এবং  কুরআন ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন :

‎إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
কিন্তু যারা তওবা করে, ( আল্লাহর প্রতি ) বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহ সমূহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেন। এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা ফুরকান :৭০

উক্ত আয়াত থেকে আমরা এটাই বুঝলাম যে, শুধু “তওবা” করে বসে থাকলে হবে না “তাওবা” করার সাথে সাথে নেক আমল করতে হবে এবং শয়তানকে পাল্টা আঘাত হানতে হবে।তাকে “নেক আমলের” আঘাতে দুর্বল করে ফেলতে হবে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা একথা মনে রাখবেন আপনি যুদ্ধের ময়দানে রয়েছেন। একবার হেরেছেন তো কি হয়েছে ? আবার উঠে ঘুরে দাঁড়ান কোমর বাঁধুন নিজেকে গুছিয়ে নিন। নিজের দুর্বলতা গুলো কাটিয়ে উঠুন, তারপর শয়তানের উপর পাল্টা আঘাত  হানুন। শয়তানকে মাথার উপরে তুলে মাটিতে আছাড় মারুন।এখানে “তাওবা” হল ঘুরে দাঁড়ানো আর “নেক আমল” হল শয়তানের উপর পাল্টা আঘাত। তাইতো আল কোরানে বহুবার “তাওবার” পর নেক আমলের কথা এসেছে: مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا
অর্থাৎ যারা তওবা করে ঈমান আনে এবং নেক আমল করে।

প্রিয় ভাই ও বোনরা, আপনারা যদি শয়তানের কাছে বার বার পরাজিত হন , বার বার আছার খান এতে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই, নিরাশ হওয়ারও কিছু নেই। আপনি বারবার ঘুরে দাঁড়ান আরো বেশি উদ্যম ও আরো বেশি সাহস নিয়ে, শয়তানের মুকাবেলা করুন। আসলে  সত্যি বলতে কি মুমিনের জীবনটাই হচ্ছে এমন।

কখনো আপনি শয়তানকে হারাবেন আবার কখনো শয়তান আপনাকে হারাবে।শয়তানের সাথে এই মল্ল যুদ্ধ আপনার মৃত্যু পর্যন্ত চলতেই থাকবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত “তাওবার” এই হাতিয়ার আপনার হাতে আছে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার নিরাশ হওয়ার কিছুই নেই।

কিন্তু সাবধান কখনোও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না এই ভেবে যে, আমি  গুনাহ হতে আর কখনোই বের হতে পারবো না। আমি নিজেকে গুনার সাগরে হারিয়ে ফেলেছি। না ভাই, এমনটি কখনই ভাববেন না।
বারবার তওবা করার পর আপনি আবার শয়তানের ফাঁদে পড়ে গেলেও  কখনো নিরাশ হবেন না। আপনি শয়তানের কাছে বারবার হারবেন এ বাস্তবতা মেনে নিন। এবং শয়তানের মোকাবেলায় “তওবা” এবং “নেক আমলের” হাতিয়ার নিয়ে যাপিয়ে পরুন। সে যদি এক কোটি বারও আপনাকে মাটিতে ফেলে দেয়, এক কোটি বারও আপনাকে গুনাহে লিপ্ত করে, আপনি এক হাজার কোটিবার তাওবা করবেন। এক হাজার কোটি বার আপনি ঘুরে দাঁড়াবেন। তারপরও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন যদি আপনি খালেছ দিলে তওবা করেন।যেমন আল্লাহ তা’য়ালা বলেন :

‎قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা যুমার : ৫৩

তাই মুষ্টিবদ্ধ হাতে আজ এ শপথ করুন:
হে পাপিষ্ট দুরাচার শয়তান, তুই যদি আমাকে এক হাজার কোটি বারও গোনাহে লিপ্ত করাস, তবে আমি একলক্ষ কোটিবার তাওবা করব। কোটি কোটি নেক আমল দিয়ে আমার আমলনামা ভরে তুলবো। আমি কখনো তোর সামনে পরাজয় স্বীকার করবো না। আমি কখনো “তাওবা” ও “নেক আমলের” অস্ত্র ত্যাগ করবো না।
আমি তোর সকল ষড়যন্ত্রকে পদদলিত করে আমি আমার রবের সাথে জান্নাতে মিলিত হব।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা শুধু ফরজ আমল করেই বসে থাকবেন না,  সাথে সাথে সুন্নত এবং নফল আমলও করুন। যে ব্যক্তি সুন্নাত ও নফল আমল করে, সে ব্যক্তিকে শয়তান সহজেই ফরজ আমল থেকে গাফেল করতে পারে না।

মনে রাখবেন, আপনার প্রতিটি নেক আমল শয়তানের গালে এক একটি করে চপেটাঘাত। তাই সব সময় আপনার জবানে আল্লাহর জিকির জারি রাখুন। শয়তানের গালে একের পর এক চড় কষতে থাকুন। সে আপনার মনে কুমন্ত্রণা দেওয়ার সুযোগ পাবে না। একটু সুযোগ পেলেই কোরআন তেলাওয়াত করুন, কেয়ামুল্লাইল ও  নফল নামাজের প্রতি মনোযোগী হোন, এভাবে ধারাবাহিক আমল করলে ইনশাআল্লাহ শয়তান আপনার প্রতি দুর্বল হতে থাকবে। এক সময় সে আপনার কাছে ঘেষতেও ভয় পাবে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, গাফলতির সময় আর নেই, আবার জেগে উঠুন পূর্ণ উদ্যমে,ফেলে আসা দিনগুলোর সব পাপ পন্কিলতা, তাওবার অশ্রুতে ধুয়ে মুছে সব সাফ করে ফেলুন। আসুন নতুন করে শুরু হোক শয়তানের বিরুদ্ধে অনন্ত এক যুদ্ধ । হাতে তুলে নিন “তাওবা” ও “নেক আমলের” অস্ত্র। যতই শয়তান আপনাকে গুনাহের ফাঁদে ফেলুক, ইনশাআল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত আপনি তার কাছে হার মানবেন না।

নিশ্চয়ই কোন একদিন আপনার কোন খালেস “তওবা” অথবা নির্জন রাতে আপনার ফুফিয়ে কান্নার চাপা শব্দ, হয়তো আপনার রবের রহমতের সাগরে ঢেউ তুলবে। আর  তিনি নিজেই আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবেন সুখময় জান্নাতের সবুজ উদ্যানে। গুনাহের বিরুদ্ধে নফসের বিরুদ্ধে শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত প্রতিটি মো’মেন ভাই ও বোনদের কে দু’টি আয়াত স্বরণ করিয়ে বিদায় নিব,  মহান আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। সূরা আনকাবুত :৬৯

মহান আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন :
‎يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنتُمْ تَحْزَنُونَ
হে আমার বান্দাগণ, তোমাদের আজ কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। সূরা যুখরুফ : ৬৮
পরিশেষে বলতে চাই যে, শয়তানের সাথে  এই যুদ্ধে আমাদেরই  জয় হবে ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকল কে শয়তানের  বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তার দ্বীনের পথে আমৃত্যু প্রতিষ্ঠিত থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।।

More News Of This Category

আজকের সময় ও তারিখ

এখন সময়ঃ সকাল ১০:৪৬

আজঃ বৃহস্পতিবার,

বর্ষাকাল

২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি


© All rights reserved © 2023 ISLAM AND LIFE
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ubaidullah

You cannot copy content of this page