1. islamandlifestudio@gmail.com : islamandlife :
  2. saif17rfl@gmail.com : Muhammad Saifullah : Muhammad Saifullah
মানুষকে কীসের সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে? || জিসম, জাসাদ ও বাদান এর পার্থক্য কি? || বিস্তারিত জানুন - Islam and Life
বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৬:৫৮ অপরাহ্ন

মানুষকে কীসের সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে? || জিসম, জাসাদ ও বাদান এর পার্থক্য কি? || বিস্তারিত জানুন

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩

মৃত্যুর সময়  রূহ নাকি নাফস  কোনটি চিরতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়?

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!

প্রিয় দর্শক! আজকে আমরা মানুষের মূল গঠন-উপাদান অর্থাৎ দেহ, আত্মা ও রূহ নিয়ে আলোচনা করবো।

মানুষ কী দ্বারা গঠিত অথবা জীবিত মানুষ কী কী উপাদান দ্বারা গঠিত হয়েছে? দেহ, আত্মা ও রুহ কি এক ও অবিচ্ছেদ্য?  নাকি এগুলো পৃথক বস্তু? দেহ ও আত্মার পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে বিদ্যমান? আত্মা কি নশ্বর বা আত্মার কি বিনাশ ঘটে? নাকি আত্মা অবিনশ্বর, এর কোনো বিনাশ ঘটে না? রূহ বলতে কী বোঝায় বা রূহের প্রকৃত স্বরূপ কী? ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের সকল গঠন-উপাদান, আত্মা ও রূহ নিজ নিজ স্থানে বিদ্যমান থাকে নাকি এর কোনো একটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অথবা মৃত্যুর সময় মানুষের আত্মা বা প্রাণ নাকি রূহ কোনটি চলে যায়- এসব বিষয়ে সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষের মাথায় হাজার রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

অ্যারিস্টটলের মতে দেহ ও আত্মা- এক ও অবিচ্ছেদ্য দ্রব্য; দুটি পৃথক দ্রব্য নয়। আত্মার কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই বরং আত্মা হলো দেহের সংগঠনী শক্তি (Entelechy) বিশেষ। অর্থাৎ তাঁর মতে দেহ ও আত্মার সম্পর্ক হলো উপাদানের সঙ্গে আকারের সম্পর্ক। সুতরাং যখন দেহের বিনাশ ঘটে, তখন আত্মারও বিনাশ ঘটে। [bibortonpoth.com/7497 _Soul]

আস্তিক নামে পরিচিত ছয়টি ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়ের মতে আত্মাকে সাধারণত একটি স্থায়ী আধ্যাত্মিক সত্তা মনে করা হয়। এই সত্তা দেহকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকে ও মৃত্যুবরণ করে এবং মৃত্যুর পর অন্য দেহে অবস্থান্তর প্রাপ্ত হয়। [banglapedia.org/index.php AvZ¥v] অর্থাৎ আত্মা হলো অবিনশ্বর- এটা মারা যায় বটে, তবে নিঃশেষ হয় না বরং রূপ বদলায়। একক জনমে একেক ধরনের রূপ গ্রহণ করে।

আবার বৌদ্ধদর্শনের ক্ষণিকত্ববাদ অনুসারে, সমগ্র বিশ্ব একটি অন্তহীন পরিবর্তন প্রক্রিয়ার অধীন। সকল শরীরী এবং অশরীরী বস্তু নিরন্তর পরিবর্তনশীল। সুতরাং, মানুষের মধ্যে অবিনশ্বর, শাশ্বত বা স্থায়ী বলে কিছু থাকতে পারে না। [banglapedia.org/index.php AvZ¥v]  অর্থাৎ অবিনশ্বর আত্মার কোনো অস্তিত্ব নেই।

এভাবে একেক ধর্ম, দর্শন ও ব্যক্তি দেহ ও আত্মা- এ দু’টির বিষয়ে একেক রকম মতামত জানিয়েছেন তবে রূহ স্পর্কে কেউ ই কোনো ধারণা দিতে পারেননি। প্রত্যেকে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-ভাবনা অনুসারে যেসব মন্তব্য করেছেন, সেগুলোর কোনোটাই সম্পূর্ণ সঠিক প্রমাণিত হয়নি বরং অনেক প্রশ্নের মুখে সকলের উত্তরই মুখ থুবড়ে পড়েছে, ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

আসলে কোনো সৃষ্টিজীবের পক্ষে তার নিজের সৃষ্টি উপাদান সম্পর্কে নির্ভুল ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়। বরং মানুষকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, কেবল তাঁর পক্ষেই দেহ, আত্মা ও রূহ সম্পর্কে নির্ভুলভাবে বলা সম্ভব। কেননা, তিনিই এগুলো সৃষ্টি করেছেন। তাই একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন যে, এগুলোকে তিনি কীভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব দেহে আত্মা এবং রূহ- কোনটি কীভাবে সক্রিয় থাকে।

প্রিয় দর্শক! এ কারণে আজকে আমরা নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আল-কুরআনের আলোকে দেহ, আত্মা ও রূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ।

  • মানুষকে কীসের সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে?

মানুষের সৃষ্টি প্রসঙ্গে সূরা সদে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ ‎﴿٧١﴾‏ فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ ‎﴿٧٢﴾‏

‘যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন : আমি কাদা মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব। যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মুখে সেজদায় নত হয়ে যেয়ো।’ [সূরা সদ, ৩৮: ৭১]

আয়াতে কারীমা থেকে বোঝা যায়- আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ৩ টি বিষয়ের সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ জিসম বা দেহ, নফস বা আত্মা এবং রূহ- এই তিনটির সমন্বয়ে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

  • প্রথমত কাদা মাটি হতে কায়া বা মানুষের দৈহিক অবয়ব তৈরি করা হয়েছে এবং এই অবয়বের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন করা হয়েছে, যাকে এককভাবে জিসম বা দেহ বলা হয়।
  • দ্বিতীয় পর্যায়ে এই দৈহিক গঠনকে নফস- প্রাণ বা আত্মা দান করার মাধ্যমে সুষম বা পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে এবং
  • তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রাণ সঞ্চারিত সেই দেহে রূহের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

১. জিসম বা দেহের পরিচয় :

মানুষের পূর্ণাঙ্গ দেহ কাঠামোকে আরবী ভাষায় “জিসমুন” এবং ইংরেজি ভাষায় “হিউমেন এনাটমি (Human anatomy) বলা হয়। গ্রস এনাটমি (gross anatomy) বা সামগ্রিক অঙ্গসংস্থান এবং মাইক্রস্কপিক এনাটমি (microscopic anatomy) বা আণুবীক্ষণিক অঙ্গসংস্থান মিলে সমগ্র মানবদেহের যে গঠন- মূলত সেটাকেই জিসম, হিউমেন এনাটমি, মানব অঙ্গসংস্থান বা দেহ বলা হয়। অর্থাৎ মানব শরীরের বাহ্যিক বা খালি চোখে দৃশ্যমান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তথা মাথা, ঘাড়, বক্ষ, পিঠ, পেট, বাহু, হাত, পা, পায়ের পাতা এবং অভ্যন্তরীণ বা খালি চোখে দৃশ্যমান নয়- এমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন: হৃদপিন্ড, ফুসফুস বা কোষ ইত্যাদির সমন্বিত রূপকে জিসম বা দেহ বলা হয়। [wikipedia.org/wiki/Outline_of_human_anatomy | wikipedia.org/wiki/Human_body] মোটকথা, মানুষের শরীরের সকল বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্মিলিত গঠনকে জিসম বা দেহ বলা হয়।

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নিজ হাত দ্বারা মাটি হতে আদি মানব আদম আ. এর জিসম বা দেহ সৃষ্টি করেছেন এবং নারী-পুরুষের জৈবিক ক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির সারাংশ তথা বীর্য হতে আদম আ. এর সন্তান-সন্তুতি, বংশধর ও সাধারণ মানুষের জিসম বা দেহ সৃষ্টি করেছেন।

  • জিসমজাসাদ ও বাদান এর পার্থক্য :

কুরআনুল কারীমে জিসম বা দেহের সমার্থক বা সম্পর্কীত আরো ২ টি শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। সে শব্দ দু’টি হলো : জাসাদ এবং বাদান। তবে এই শব্দ তিনটির অর্থ কাছাকাছি হলেও এগুলোর মধ্যে কিছু ব্যবহারিক পার্থক্য আছে।

  • জিসম

মানুষ বা প্রাণীর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দেহ অবয়বকে জিসম বলা হয়। মূলত জিসম বলার মাধ্যমে মানুষের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমগ্র দেহ কাঠামো এবং বাহ্যিক সৌন্দুর্যের সমন্বিত রূপ বোঝানো হয়। জিসমের প্রধান দু’টি বৈশিষ্ট্য আছে : একটি হলো জিসমের মধ্যে নফস অবস্থান করে বা প্রাণ থাকে আর দ্বিতীয়টি হলো জিসম বিশিষ্ট প্রাণী খাদ্য গ্রহণ করে।  যেমন: তালূত বাদশা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

قَالَ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ ۖ

‘তিনি বললেন : আল্লাহ তোমাদের জন্য তাকে (বাদশাহ হিসেবে) মনোনীত করেছেন এবং তাকে জ্ঞান ও দেহ অবয়বে সমৃদ্ধি দান করেছেন।’ [সূরা বাকারা, ২: ২৪৭]

বাদশাহ তালূত ছিলেন সে সময়ের বনী ইসরাইলদের মধ্যে সবচে’ সুন্দর ও সুগঠিত দেহ ও শারীরিক অবয়বের অধিকারী ব্যক্তি এবং একই সাথে জ্ঞানী ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব (তাফসীরে জালালাইন)। তাই আল্লাহ তায়ালা আলোচ্য আয়াতে তার সুন্দর ও সুগঠিত দৈহিক অবয়ব বোঝাতে “জিসম” শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

  • জাসাদ

জাসাদ বলতে সাধারণত দেহের বাহ্যিক অবয়বকে বোঝানো হয়। ফলে যেসকল বস্তুর শুধুমাত্র বাহ্যিক দেহ অবয়ব আছে কিন্তু ক্রিয়াশীল অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই, তাকে জাসাদ বলা হয়। এ কারণে প্রাণহীন দেহসর্বস্ব বস্তু, মৃত প্রাণী বা মানুষকেও জাসাদ বলা হয়। জাসাদের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জাসাদ বিশিষ্ট বস্তু আহার করে না বা খাদ্য গ্রহণ করে না। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন :

وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدًا لَّا يَأْكُلُونَ الطَّعَامَ

‘আমি তাদেরকে (অর্থাৎ রাসূলদেরকে) এমন দেহসর্বস্বরূপে সৃষ্টি করিনি যে, তারা খাবার খায় না।’ [সূরা আম্বিয়া, ২১: ৮]

  • বাদান

বাদান বলতে সাধারণত কোনো দীর্ঘ আকৃতি বিশিষ্ট বস্তুর মূল অংশকে বোঝানো হয়, যা উক্ত বস্তটির সামগ্রীক আকারের তুলনায় ছোট বা খাট হয়ে থাকে। এ কারণে মানুষের মাথা হতে কোমর পর্যন্ত হাত এবং পা বিহীন অংশকে বাদান বলা হয়। বাদানের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এতে প্রাণের কোনো স্পন্দন থাকে না। যেমন: আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের লাশের বিষয়ে বলেন :

فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً ۚ

‘অতএব আজ আমি তোর প্রাণহীন দেহ সমুদ্রের বাইরে নিক্ষেপ করছি, যেন তা পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকে।’ [সূরা ইউনুস, ১০: ৯২]

ওপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, মানুষের ক্ষেত্রে জিসম, জাসদ ও বাদান- তিনটি শব্দই প্রযোজ্য। প্রাণহীন দেহের মূল অংশ বোঝাতে “বাদান”, বাহ্যিক অবয়ব ও সৌন্দুর্য বোঝাতে “জাসাদ” এবং প্রাণ সম্পন্ন বাহ্যিক ও  অভ্যন্তরীণ গঠন, সৌন্দুর্য ও সামগ্রীক দেহাবয়ব এবং পরিপূর্ণ ও জীবিত মানুষ বোঝাতে “জিসম” শব্দ ব্যবহার করা হয়।

  • মানব দেহের মূল উপাদান কি?

এখানে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মানুষকে মূলত কি উপাদান হতে সৃষ্টি করা হয়েছে? মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে? কাদা মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে? এঁটেল মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে? কালো পোড়া মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে? নাকি ঠনঠনে শুষ্ক মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে?

আদি মানব আদম আ.কে মূলত মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এই মাটির বিভিন্ন প্রকার আছে। আবার মাটি হতে সেই সৃষ্টি একটিমাত্র ধাপ বা পর্যায়ে সম্পন্ন হয়নি বরং বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছে। যেমন: উদাহরণ হিসেবে একটি কটন বা সুতি জামার কথা বলা যায়। যদি বলা হয় যে, এই জামাটি তুলা দিয়ে বানানো হয়েছে, বা সুতা দিয়ে বানানো হয়েছে অথবা যদি বলা হয় যে, জামাটি থান কাপড় দিয়ে বানানো হয়েছে। তাহলে সবগুলো কথাই সঠিক হবে। কারণ কটনের মূল উপাদান হলো তুলা। সেই তুলা হতে স্পিনিং মিল বা সুতা বানানোর কারখানায় প্রথমে সুতা বানানো হয়। তারপর সেই সুতা দিয়ে টেক্সটাইল মিলে থান কাপড় বানানো হয়। অবশেষে থান কাপড় থেকে জামা বানানো হয়।

তুলার যেমন বিভিন্ন প্রকার আছে এবং তুলা থেকে একটি সুতি জামা বানানোর ক্ষেত্রে যেমন বিভিন্ন ধাপ বা পর্যায় আছে, মাটি হতে মানব সৃষ্টিরও তেমনি বিভিন্ন ধাপ বা পর্যায় আছে।

মানুষকে যে মাটি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে মাটির কিছু বৈশিষ্ট, গুণগত অবস্থা এবং পর্যায় রয়েছে। কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে মাটির সেসব সত্তাগত বিভাজন, বৈশিষ্ট ও অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন:

ক. তুরাব (تُرَاب) বা মাটি : যে মাটিতে পানি মেশানো হয়নি, তাকে তুরাব বলা হয়। এটি হলো মাটির মূল বা প্রকৃত অবস্থা। মাটির এই মূল ও সত্তাগত অবস্থার কথা উল্লেখ করে সূরা ফাতিরের ১১ নং আয়াতে মানুষকে তুরাব তথা শুধু মাটি হতে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

খ. তীন (طِين) বা কাদা মাটি : যে মাটিতে পানি মেশানো হয়েছে, তাকে তীন বা কাদা মাটি বলা হয়। যেহেতু মাটি হতে কোনো অবয়ব তৈরি করার জন্য তাতে পানি মিশেয়ে কাদার গোলা তৈরি করা হয়, তাই মাটির এই প্রক্রিয়াগত অবস্থার কথা উল্লেখ করে সূরা সাজদার ৭ নং আয়াতে মানুষকে তীন তথা কাদা মাটি হতে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

গ. তীনে লাযিব (طِينٍ لَّازِب) বা এঁটেল মাটি : মাটি মূলত ৩ প্রকার। এঁটেল মাটি, বেলে মাটি এবং দোআঁশ মাটি। যে মাটিতে বালু অপেক্ষা পলি ও কাদার পরিমান বেশি থাকে এবং দানা গুলি খুব ছোট হয়, তাকে এঁটেল মাটি বলে। এঁটেল মাটি খুব নরম ও মিহি হয়ে থাকে এবং এই মাটি বেশি পানি ধরে রাখতে পারে। আমরা জানি, মানবদেহে ৪০-৬০ শতাংশ পানি রয়েছে। [জীব বিজ্ঞান (নবম-দশম শ্রেণী)] তাই মাটির এই বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে সূরা সাফ্ফাতের ১১ নং আয়াতে মানুষকে তীনে লাযিব তথা এঁটেল মাটি হতে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

ঘ. হামাইম মাসনূন (حَمَإٍ مَّسْنُون) বা পোড়া কালো মাটি : কাদা মাটি যখন রোদে পুড়ে ভালোভাবে শুকিয়ে যায়, তখন তা কালো হয়ে যায়। যেহেতু কাদা মাটির অবয়বকে ভালোভাবে শুকিয়ে আদম আ.কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাই সৃষ্টির এই ধাপ বা পর্যায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে সূরা হিজরের ২৬ নং আয়াতে মানুষকে হামাইম মাসনূন তথা পোড়া কালো মাটি হতে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

ঙ. সালসালিন কাল ফাখ্খার (صَلْصَالٍ كَالْفَخَّار) বা ঠনঠনে শুষ্ক মাটি : কাদা মাটি যখন রোদে পুড়ে ভালোভাবে শুকিয়ে যায়, তখন তাতে টোকা দিলে ঠনঠনে শব্দ হয়। কাদা মাটির এ অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে সূরা আর-রহমানের ১৪ নং আয়াতে মানুষকে সলস-লিন কাল ফাখ্খার তথা ঠনঠনে শুষ্ক মাটি হতে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

সুতরাং বলা যায় যে, মানুষকে কি উপাদান হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত কুরআনের বর্ণনায় কোনো বৈপরীত্য বা অসামঞ্জস্যতা নেই। মানুষকে মাটি হতে বিভিন্ন ধাপ বা পর্যায়ে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং কুরআনুল কারীমে সৃষ্টির সেই একাধিক স্টেজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মূলত বর্ণনার অসামঞ্জস্যতা নয় বরং সৃষ্টিকর্মে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিখাঁদ নৈপুন্য ও সৃষ্টিকুশলতা ই প্রকাশ পেয়েছে।

فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ

‘নিপুনতম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না পুত-পবিত্র।’ [সূরা মু’মিনূন, ২৩: ১৪]

More News Of This Category

আজকের সময় ও তারিখ

এখন সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:৫৮

আজঃ বৃহস্পতিবার,

বর্ষাকাল

২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি


© All rights reserved © 2023 ISLAM AND LIFE
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ubaidullah

You cannot copy content of this page