1. islamandlifestudio@gmail.com : islamandlife :
  2. saif17rfl@gmail.com : Muhammad Saifullah : Muhammad Saifullah
মানুষের পূর্বে পৃথিবীতে কারা বসবাস করতো? মানুষকে কখন সৃষ্টি করা হয়েছে? - Islam and Life
বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

মানুষের পূর্বে পৃথিবীতে কারা বসবাস করতো? মানুষকে কখন সৃষ্টি করা হয়েছে?

মুহাঃ উবায়দুল্লাহ
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩

আসসালামু আলাইকম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!

প্রিয় দর্শক! আজকে আমরা কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে সৃষ্টির সূচনা নিয়ে আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ।

বিশ্ব প্রকৃতির দিকে গভীরভাবে মনোনিবেশ করলে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, বিশ্বজগত ও বিশ্বজগতের মধ্যে বসবাসকারী সকল প্রাণীর সৃষ্টি এবং এর পুনরাবর্তনের সামর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। সৃষ্টিজগতের সূচন বা গোটা সৃষ্টিকে তিনিই অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন :

قُلْ هَلْ مِن شُرَكَائِكُم مَّن يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ ۚ قُلِ اللَّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ .

‘বলুন- তোমরা যাদের (আল্লাহর সঙ্গে) শরিক করো তাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে সৃষ্টির সূচনা করে এবং পরে তার পুনরাবর্তন ঘটায়? আপনি বলে দিন- কেবল আল্লাহই সৃষ্টির সূচনা করেন এবং পরে এর পুনরাবর্তন ঘটান। সুতরাং তোমরা কিভাবে সত্য থেকে ফিরে যাচ্ছ?’ [সুরা ইউনুস, ১০: ৩৪]

আলোচ্য আয়াতে মুশরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি খণ্ডন করে সৃষ্টির সূচনা, সমাপ্তি ও পুনরাবর্তনের ক্ষমতা বর্ণনা করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশ্বজগতের নিয়ন্ত্রক হওয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ই হলেন বিশ্বজগতের সূচনাকারী ও সৃষ্টিকর্তা। তিনিই আসমান-যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। তবে সকল সৃষ্টিকে তিনি একত্রে সৃষ্টি করেননি। বরং পর্যায়ক্রমে একটির পর একটিকে সৃষ্টি করেছেন। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালার এ ধারাবাহিকতা সম্পর্কে অনেক বিবরণ রয়েছে। সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পর কি সৃষ্টি করা হয়েছে, বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে কাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করা হয়েছে, কোন জাতির পর কোন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে এসম্পর্কে অনেক আয়াতের উল্লেখ আছে। এ প্রসঙ্গে আলী ইবনু আবু তালিব রা. বলেন : আল্লাহর কিতাবে তোমাদের পূর্বকালীন সমাচার, পরবর্তী কালের ঘটনাবলী এবং বর্তমানের বিধি-বিধান রয়েছে। [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ০৫ : সৃষ্টি জগতের সূচনা]

আল-কুরআনে যেমন সৃষ্টির সূচনা এবং বিভিন্ন জাতির আদি অবস্থা, আবির্ভাব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা আছে, তেমনি রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীসেও এ সব বিষয়ে আলোচনা আছে। ইমাম বুখারী রহ. সহীহ আল-বুখারীর সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়ে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির সূচনা থেকে জান্নাতীদের তাদের মনযিলে এবং জাহান্নামীদের তাদের মনযিলে প্রবেশ করা পর্যন্ত অবস্থার সংবাদ প্রদান করেন। কেউ তা মুখস্থ রাখতে পেরেছে আবার কেউ বা তা ভুলে গিয়েছে। [সহীহ বুখারী: ৩১৯২ (ইফাবা: ২৯৬২)]

প্রিয় দর্শক! ওপরের আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ তায়ালাই সৃষ্টির সূচনা করেছেন এবং বিভিন্ন ধাপে ধাপে বস্তুজগতের সবকিছু সৃষ্ট করেছেন। সুতরাং এবারে আমরা ধারাবাহিকভাবে সৃষ্টিকুলের সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ!

 

 

  • প্রথম পর্যায় : আরশ ও পানি সৃষ্টি

আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকর্মের সামগ্রীক অবস্থা সম্পর্কে বলেন :

اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ ‎

‘আল্লাহ ই সমস্ত কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর কর্ম বিধায়ক।’ [সূরা যুমার, ৩৯: ৬২]

শাস্ত্রবিদগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন যে, আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব ব্যতীত সৃষ্টিজগতে যা কিছু আছে সবই তাঁর সৃষ্ট ও নিয়ন্ত্রণাধীন। আল্লাহ তায়ালা আকাশসমূহ, পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সব কিছু ছ’দিনে সৃষ্টি করেছেন (সূরা হাদীদ, ৫৭: ৪)। তবে আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে অন্য কোনো সৃষ্টির অস্তিত্ব ছিল কি-না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।

কালাম শাস্ত্রবিদদের একদলের মতে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর পূর্বে কিছুই ছিল না; নিতান্ত অনস্তিত্ব থেকেই এগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে। আর অন্যরা বলেন : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে অন্য মাখলুকের অস্তিত্ব ছিল। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন :

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۗ

‘তিনিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয়টি সময়কালে সৃষ্টি করেছেন, তখন তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর- যেন তোমাদের মধ্যকার সৎকর্মশীলদের বাছাই করতে পারেন।’ [সূরা হুদ, ১১: ৭]

এ আয়াতে আসমান ও যমীন সৃষ্টির পূর্বে পানির ওপর আল্লাহর আরশ অবস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া একটি হাদীসে ইমরান ইবনু হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : আমি … নবী সা. এর নিকট উপস্থিত হলাম। … তাঁর নিকট ইয়ামানের কিছু লোক আসল। … তারা বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দ্বীন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য আপনার খেদমতে এসেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন : একমাত্র আল্লাহই ছিলেন, তিনি ছাড়া কিছুই ছিল না। তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর। … [সহীহ বুখারী: ৩১৯১ (ইফাবা: ২৯৬২)]

সুতরাং ওপরোক্ত দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে, পানি, আল্লাহর আরশ এবং আরশের মধ্যে অবস্থিত লাওহে মাহফুজসহ আরশ-সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয় হলো সৃষ্টি জগতের ১ম পর্যায়ের সৃষ্টি।

  • ২য় পর্যায় : ফেরেশতা সৃষ্টি 

আল্লাহ তায়ালা আরশ সৃষ্টির পর ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন, যারা তাঁর আরশ বহন করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ

‘যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।’ [সূরা গফির, ৪০: ৭]

আল্লামা যাহাবী রহ. আল-উলুওউ (العلو) নামক গ্রন্থে বিভিন্ন আছারের আলোকে দাবী করে বলেন : আরশ সৃষ্টির পর পরই ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি তাঁর শাইখদের সূত্রে বর্ণনা করেন। আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম পানির ওপর আরশ সৃষ্টি করেছেন। আরশ সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করলেন। তখন ফেরেশতারা বললো : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কি কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন। উত্তরে আল্লাহ বললেন : আমার আরশ বহন করার জন্য। ফেরেশতারা বলল : আপনার আরশ বহন করার মত শক্তি-সামর্থ্য কারো আছে কি? আল্লাহ বললেন : তোমরা বলবে- লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল ’আলিয়িল ’আজীম (لا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم)। অর্থাৎ মহান আল্লাহ ব্যতীত কারো কোনো শক্তি-সামর্থ নেই। এটা বললে তোমরা আরশ বহন করতে সক্ষম হবে। [https://www.islamweb.net/ar/fatwa/94388]

সুতরাং ওপরোক্ত দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ফেরেশতারা হলেন ২য় পর্যায়ের সৃষ্টি।

  • ৩য় পর্যায় : কলম সৃষ্টি

আল্লাহর আরশ অস্তিত্ব থাকা অবস্থায় বস্তু জগতের মধ্যে যা প্রথমে সৃষ্টি করা হয়েছে তা হলো “কলম”। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বার বার কলমের নামে শপথ করেছেন। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন:

ن ۚ وَالْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُونَ ‎

‘নূন। কলমের শপথ এবং তারা যা গোপন করে (সে সবের শপথ)!’ [সূরা কলম: ৬৮: ১]

উবাদা ইবনুস সামিত রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। [সুনান আবু দাউদ: ৪৭০০]

আল্লাহ তায়ালা কলম সৃষ্টি করে কলমের মাধ্যমে সৃষ্টিজগতের সবকিছুর মাকাদীর তথা সংঘটিতব্য অবস্থার বিবরণ লিখে রেখেছেন। যেমন: আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন : আল্লাহ তায়ালা সকল মাখলুকের তাকদীর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে লিখে রেখেছেন, সে সময় আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। [সহীহ মুসলিম: ২৬৫৩ (ইফাবা: ৬৫০৭)]

সহীহ বুখারীতে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসেও রাসূলুল্লাহ সা. বললেন : একমাত্র আল্লাহই ছিলেন, তিনি ছাড়া কিছুই ছিল না। তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর। অতঃপর তিনি লাওহে মাহফুজে সব কিছু লিপিবদ্ধ করলেন …। … [সহীহ বুখারী: ৩১৯১ (ইফাবা: ২৯৬২)]

হাফিজ আবুল আলী হামদানী রহ. এর বর্ণিত তথ্য মোতাবেক জমহুর আলেমগণের অভিমত হলো : আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি সর্বপ্রথম মাখলুক হলো আরশ। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসটিও এর প্রমাণ বহন করে। [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ০৫ : সৃষ্টি জগতের সূচনা]

আলিমগণ বলেন : আল্লাহ তায়ালার কলম দ্বারা মাকাদীর লিপিবদ্ধ করার কাজটি আরশ সৃষ্টির পরে হয়েছে। অর্থাৎ  আল্লাহ যে কলম দ্বারা মাকাদীর লিপিবদ্ধ করেছেন, আরশকে তার আগে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর যে হাদীসে সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে তার অর্থ হলো : কলম এ জগতের সৃষ্টিসমূহের প্রথম সৃষ্টি। ইমাম বুখারী রহ. এর বর্ণিত হাদীসটি এ মতের পরিপূরক।

বুখারী শরীফে বর্ণিত হাদীসটিতে ইয়ামেনবাসী নবী করীম সা.কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। ফলে রাসূলুল্লাহ সা. ঠিক ততটুকুই জবাব দিয়েছেন, যতটুকু তারা জানতে চেয়েছিল। এ কারণে তিনি তাদেরকে আরশ সৃষ্টির সংবাদ দেননি।

সুতরাং ওপরোক্ত দলীল-প্রমাণের আলোকে বলা যায় যে, কলম হলো আল্লাহ তায়ালার ৩য় পর্যায়ের সৃষ্টি।

  • ৪র্থ পর্যায় : আসমান ও যমীন সৃষ্টি

আল্লাহ তায়ালা পানি, আরশ, ফেরেশতা ও কলম সৃষ্টির পর আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী ও খনিজ পদার্থসহ নানা রকম সৃষ্টি-উপাদান দ্বারা এ দু’টিকে সমৃদ্ধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ ‎.

‘যারা অস্বীকার করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল। অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ [সূরা আম্বিয়া, ২১: ৩০]

একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন : একমাত্র আল্লাহই ছিলেন, তিনি ছাড়া কিছুই ছিল না। তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর। অতঃপর তিনি লাওহে মাহফুজে সব কিছু লিপিবদ্ধ করলেন এবং আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন।  … [সহীহ বুখারী: ৩১৯১ (ইফাবা: ২৯৬২)]

সুতরাং ওপরোক্ত দলীল-প্রমাণের আলোকে বলা যায় যে, আসমান ও যমীন হলো আল্লাহ তায়ালার ৪র্থ পর্যায়ের সৃষ্টি।

  • ৫ম পর্যায় : জিন ও শয়তান সৃষ্টি

আসমান ও যমীন সৃষ্টর পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের জন্য জিনদের সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের পূর্বে জিনরাই পৃথিবীতে বসবাস করতো। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ . وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِن قَبْلُ مِن نَّارِ السَّمُومِ .

‘আমি মানুষকে কালো কাদা হতে তৈরি ঠনঠনে শুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্ট করেছি এবং ইতিপূর্বে জিনদেরকে উত্তপ্ত আগুন হতে সৃষ্টি করেছি।’ [সূরা হিজর, ১৫: ২৬-২৭]

এ আয়াতে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে জিন জাতিকে মানব জাতির পূর্বে সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া সূরা কাহাফের ৫০ নং আয়াত এবং অন্যান্য আয়াত হতে জানা যায় যে, আদম আ.কে যখন সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন সেখানে জিনদের সর্দার ইবলীস শয়তান উপস্থিত ছিল। সুতরাং এটা নিশ্চিত যে, মানুষের আগেই জিনদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে ঠিক কত বছর আগে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে কোনো তথ্য জানা যায় না। কোনো কোনো ব্যক্তির দাবী হলো : জিনদেরকে আদম আ. এর ২,০০০ (দুই হাজার) বছর পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছে। [আলামুল জিন, ১ম অধ্যায়]

সুতরাং ওপরোক্ত দলীল-প্রমাণের আলোকে বলা যায় যে, জিন ও শয়তান হলো আল্লাহ তায়ালার ৫ম পর্যায়ের সৃষ্টি।

  • ৬ষ্ঠ পর্যায় : মানুষ সৃষ্টি

জিনদের সৃষ্টির পর আল্লাহ তায়ালা মানুষদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং জিনদের মত মানুষকেও তিনি ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টি প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّيْ خَالِقٌ بَشَراً مِّنْ صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ- فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيْهِ مِنْ رُّوْحِيْ فَقَعُواْ لَهُ سَاجِدِيْنَ-

‘আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদের বললেন : আমি কালো কাদামাটি হতে তৈরি ঠনঠনে শুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্ট মানব জাতির পত্তন করব। অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সিজদায় পড়ে যেও। তখন ফেরেশতারা সবাই মিলে সিজদা করল। কিন্তু ইবলীস সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল। (আল্লাহ) বললেন : হে ইবলীস! তোর কি হলো, তুই সিজদা কারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করলি কেন? (ইবলীস) বলল : আমি এমন নই যে, একজন মানুষকে সিজদা করব, যাকে আপনি কালো কাদামাটি হতে তৈরি ঠনঠনে শুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। [সূরা হিজর, ১৫: ২৮-৩৪]

এ আয়াতে দেখা যায়, আল্লাহ যখন আদম আ.কে সৃষ্টি করলেন তখন সেখানে পূর্ব থেকেই ফেরেশতারা যেমন উপস্থিত ছিলো, তেমনি সেখানে জিন জাতির সদস্য ইবলীসও উপস্থিত ছিলো। অর্থাৎ আয়াতে কারীমা থেকে এটাই বোঝা যায় যে, জিনদের সৃষ্টি করার পরবর্তী পর্যায়ে মানুষদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

সুতরাং ওপরোক্ত দলীল-প্রমাণের আলোকে বলা যায় যে, মানুষ হলো আল্লাহ তায়ালার ৬ষ্ঠ পর্যায়ের সৃষ্টি।

প্রিয় দর্শক! এতক্ষণ আমরা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে আহরিত কিছু শক্তিশালী দলীল-প্রমাণের আলোকে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তবে আমরা এখানে যেভাবে পর্যায়গুলোকে ক্রমান্বয়ে সাজিয়েছি, আলিম সমাজে এর চেয়ে ভিন্ন ধারাক্রমও প্রচলিত আছে। আসলে আল্লাহ তায়ালা যখন সৃষ্টির সূচনা করেছেন তখন মানুষ, জিন বা অন্য কোনো সৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে তা করেননিবা আমরা কেউ তা চোখে দেখিনি। বরং আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরত ও হিকমতের কারণে যখন যেটা সৃষ্টি করা প্রয়োজন মনে করেছেন তখন সেটা সৃষ্টি করেছেন। যেমন: এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

مَّا أَشْهَدتُّهُمْ خَلْقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَا خَلْقَ أَنفُسِهِمْ وَمَا كُنتُ مُتَّخِذَ الْمُضِلِّينَ عَضُدًا ‎

‘আসমান ও যমীন সৃষ্টির সময় আমি তাদেরকে সাক্ষ্য রাখিনি এবং তাদের নিজেদের সৃজনকালেও নয়। বস্তুত আমি এমন নই যে, বিভ্রান্তকারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করবো।’ [সূরা কাহাফ, ১৮:৫১]

সুতরাং এক কথায় বলা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা কিভাবে সৃষ্টির সূচনা করেছেন, কোন সৃষ্টিজীব বা কোন বস্তু কখন সৃষ্টি করেছেন তা কেবল তিনিই ভালো জানেন। তিনি ব্যতীত এ বিষয়ে অন্য কেউ নিশ্চিতভাবে কিছুই বলতে পারে না। তাছাড়া সৃষ্টির ধারাবাহিকতা সম্পর্কে জানা ঈমান ও আমলের সাথেও সম্পৃক্ত কোনো বিষয় নয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে তাঁর সৃষ্টি-কুশলতার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার তাওফিক দান করুন, তাঁর প্রতি পরিপূর্ণরূপে ঈমান আনার তাওফিক দান করুন।

More News Of This Category

আজকের সময় ও তারিখ

এখন সময়ঃ ভোর ৫:৪০

আজঃ বৃহস্পতিবার,

বর্ষাকাল

২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি


© All rights reserved © 2023 ISLAM AND LIFE
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ubaidullah

You cannot copy content of this page