1. islamandlifestudio@gmail.com : islamandlife :
  2. saif17rfl@gmail.com : Muhammad Saifullah : Muhammad Saifullah
মৃতরা কীভাবে শুনে ও দেখে? মৃত ব্যক্তি কি তার ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের কথা জানতে পারে? - Islam and Life
বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন

মৃতরা কীভাবে শুনে ও দেখে? মৃত ব্যক্তি কি তার ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের কথা জানতে পারে?

মুহাঃ উবায়দুল্লাহ
  • Update Time : শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩

মৃতরা কীভাবে শুনে ও দেখে?
মৃত ব্যক্তি কি তার ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের কথা জানতে পারে?

আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ.
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তোমরা তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’[সূরা বাকারা, ২: ১৫৪]
এই আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হন তারা নিঃসন্দেহে জীবিত যদিও আমরা তা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু প্রশ্ন হলোÑ যারা স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন, তারাও কি জীবিত? তারা কি কবরে থাকা অবস্থায় নিজের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনবা পরিচিত মানুষদের কথা শুনতে পান? আজকে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন:
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ
‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’[সূরা আলে ইমরান, ৩: ১৮৫]আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ.
‘প্রত্যেক স¤প্রদায়ের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ (মৃত্যু) এসে যাবে, তখন তারা এটাকে এক মুহুর্ত পেছাতেও পারবেনা এবং এগিয়েও নিতে পারবে না।’[সূরা আ’রাফ, ৭: ৩৪]
তবে মৃত্যু মানেই মানুষের পরিপূর্ণ বিনাশ নয়। কিংবা আল্লাহ তায়ালা তাকে যে অস্তিত্ব দিয়েছেন তার সমাপ্তিও নয়। বরং মৃত্যুযন্ত্রণা মানব জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক পাকড়াও। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষের রূহ দেহ থেকে উড়াল দিয়ে আরেক জগতে পাড়ি জমায়, চিরস্থায়ী ঠিকানা খুঁজে বেড়ায়। যে ঠিকানায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য দুনিয়ার জীবনে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, সে ঠিকানার উদ্দেশে সফর শুরু করে।

ক্স মৃতরা কি সবকিছু শুনে এবং দেখে?
সাধারণভাবে মৃত মানুষ জীবিত মানুষের কথা শুনতে পায় না। মৃত্যুবরণ করার পর মানুষের সমস্ত শরীর, সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেভাবে কর্মক্ষম হয়ে যায়, তেমনি তার শ্রবণ শক্তিও লোপ পায়। ফলে মৃত মানুষ জীবিত মানুষের কোনো কথা শুনতে পায় না। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَن يَشَاءُ ۖ وَمَا أَنتَ بِمُسْمِعٍ مَّن فِي الْقُبُورِ.
‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান। কিন্তু আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে পারবেন না।’[সুরা ফাতির, ৩৫: ২২]অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَىٰ
‘আপনি মৃতদেরকে শোনাতে পারবেন না।’[সূরা নমল, ২৭: ৮০]

মৃত্যুর পর এবং পুনরায় জীবিত হওয়ার আগে মানুষের একটি মধ্যবর্তী জীবন আছে। মানুষকে যখন কবরস্থ করা হয়, তখন মানুষ এমন একটি সময় পার করতে থাকে যাকে বলা হয়Ñ হায়াতুল বারযাখ। বারযাখ শব্দের অর্থ হলো বাধা, অন্তরায় বা মধ্যবর্তী স্থান। সুতরাং, কবরের জীবন হলো জীবিত অবস্থা এবং পুনরুত্থানের মধ্যবর্তী জীবন। নশ্বর এ দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি এবং আখেরাতের অনিঃশেষ জীবনের পূর্ববর্তী জীবন। এ অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে এসে কেউ তাকে সালাম করলে সে তাকে চিনতে পারে এবং সালামের উত্তরও দিতে পারে। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন:
কোনো ব্যক্তি যখন তার পূর্ব পরিচিত কোনো মৃত ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে এবং তাকে সালাম দেয়, মৃত ব্যক্তি অবশ্যই তাকে চিনতে পারে এবং সালামের উত্তর দেয়। [বাইহাকী ফি শুআবিল ঈমান]

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে:
মৃত ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে যখন এমন কোনো ব্যক্তি অতিক্রম করে পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় যার সাথে তার পরিচয় ছিলো এবং তাকে সালাম করে, তখন আল্লাহ তায়ালা মৃত ব্যক্তির রূহ ফিরিয়ে দেনÑ যেন সে সালামের উত্তর দিতে পারে। [মাজমুউল ফাতাওয়া লি ইবনু তাইমিয়া: ২৪/১৭৩]

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন: আল্লাহ তায়ালা হলেন কাদিরে মতলক তথা সর্বশক্তিমান। তিনি যা ইচ্ছা করতে সক্ষম। সুতরাং জীবিত থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তিকে তিনি পূর্ণমাত্রায় শ্রবণ ও স্মৃতি শক্তি দান করেছিলেন, মৃত্যুর পর সে ব্যক্তিকে সাময়িক সময়ের জন্য শ্রবণ ও স্মৃতি শক্তি ফিরিয়ে দেওয়া তার জন্য খুবই সহজ একটি কাজ।

মুহাদ্দিসগণ আরও বলেন: কবর যিয়ারত করার কারণে মৃত ব্যক্তির ওপর রহমত বর্ষিত হয়। কেননা, কবর যিয়ারতের সময় জীবিত ব্যক্তিরা মূলত মৃতদের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই দোয়া করে থাকেন। আয়শা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন:
… জিবরীল আ. এসে বলেছেনÑ আপনার প্রভু আপনাকে আল-বাকীর (কবরের) অধিবাসীদের জন্য দোয়া করতে বলেছেন। আয়শা রা. বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাদের জন্য কীভাবে দোয়া করবো? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন: তুমি এভাবে দোয়া করবেÑ
السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَ.
কবরবাসী মুমিন এবং মুসলিমদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মধ্য থেকে পূর্বে মৃত্যুবরণকারী ও পরে মৃত্যুবরণকারী সকলের ওপর রহম করুন। অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হবো, ইনশা আল্লাহ! [সহীহ মুসলিম: আন্তর্জাতিক নম্বর-৯৭৪; ইফাবা নম্বর-২১২৫]

অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন: মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ৩টি আমলের সাওয়াব বন্ধ হয় না: ১. সাদাকায়ে জারিয়া, ২. এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় অথবা ৩. এমন সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। [সহীহ মুসলিম: আন্তর্জাতিক নম্বর-১৬৩১; ইফাবা নম্বর-৪০৭৭]

তাছাড়া কবর যিয়ারত করা সুন্নতও বটে। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন: তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কেননা তা মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। [সহীহ মুসলিম:আন্তর্জাতিক নম্বর: ৯৭৬; ইফাবা নম্বর-২১২৮]
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে: তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কেননা তাআখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। [সুনান ইবনু মাজাহ: ১২৫৮। সুনান নাসায়ী: ২০৩৪]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে মা বাবা সহ সকল আত্মীয়-স্বজনদের কবর যিয়ারত করা এবং কবর যিয়ারত করার মাধ্যমে তাদের জন্য রহমত ও প্রশান্তির দোয়া করার তাওফিক দান করুন!

 

More News Of This Category

আজকের সময় ও তারিখ

এখন সময়ঃ সকাল ৬:২৮

আজঃ বৃহস্পতিবার,

বর্ষাকাল

২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি


© All rights reserved © 2023 ISLAM AND LIFE
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ubaidullah

You cannot copy content of this page