1. islamandlifestudio@gmail.com : islamandlife :
  2. saif17rfl@gmail.com : Muhammad Saifullah : Muhammad Saifullah
কেমন হবে পৃথিবীর শেষ দিন? মানুষ কি সে দিনের ভয়াবহতা পূর্ব থেকেই টের পাবে? - Islam and Life
বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

কেমন হবে পৃথিবীর শেষ দিন? মানুষ কি সে দিনের ভয়াবহতা পূর্ব থেকেই টের পাবে?

মুহাঃ উবায়দুল্লাহ
  • Update Time : শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ۚ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ

‘হে মানুষ! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার।’ [সূরা হজ্জ, ২২: ১]

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!

সুপ্রিয় দর্শক-শ্রোতাবৃন্দ! আজকে আমরা পৃথিবীর শেষ দিন এবং এ দিনের ভয়াবহতার বিভিন্ন চিত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ!

আদিকাল থেকে এ পৃথিবীর কোনো অস্তিত্ব ছিল না, বরং একটা নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যকার যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং পৃথিবী হলো সৃষ্ট বস্তু। আর যার সৃষ্টি আছে, তার ধ্বংসও আছে- এটা এক চিরন্তন সত্য।

প্রায় সকল ধর্ম থেকে শুরু বিভিন্ন রূপকথা-উপকথায় পৃথিবীর এই চূড়ান্ত পরিণতির কথা উল্লেখ আছে। এমনকি বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিদ ও কসমোলজিস্ট স্টিফেন হকিংও এই নিয়ে বহু ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছেন। ফলে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দিনরাত বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা তো নিশ্চিতরূপেই বাস্তবায়িত হবে- এতে সন্দেহ বা অবিশ্বাসের কোনো সুযোগ নেই।

اِنَّ السَّاعَۃَ لَاٰتِیَۃٌ لَّا رَیۡبَ فِیۡهَا

‘নিশ্চয় মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ [সূরা গাফির, ৪০: ৫৯]

এ পৃথিবী ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে, প্রতিদিন এটি একটু একটু করে অনিবার্যরূপে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো পৃথিবীর শেষ দিনটি কেমন হবে? যে দিন হবে পৃথিবীর শেষ দিন, যে দিনের পর পৃথিবীর আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না- সেই দিনটির চিত্র কেমন হবে? সে দিনটি কি বর্তমানের স্বাভাবিক দিনের মত হবে? সে দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মানুষ কি তার নিয়মিত অভ্যাস অনুসারে কাজকর্ম করতে থাকবে? মা তার শিশুকে দুধ পান করাবে, কেউ কেউ হাঁট-বাজারে যাবে, কৃষক তার গবাদি পশু নিয়ে মাঠে যাবে? নাকি সকলে বুঝে ফেলবে যে, আজকেই পৃথিবীর শেষ দিন! তাই শেষ মুহুর্তের অপেক্ষা করবে?

মানুষ যেদিন থেকে জানতে পেরেছে যে, এ পৃথিবী ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে- সেদিন থেকে মানুষ শেষ দিনের অবস্থা, শেষ দিনের কর্মকান্ড ও ধ্বংসের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে এবং সে সম্পর্কে কিছু বিখ্যাত আদিকালীন ও সমকালীন তত্ত্ব আছে, যার মধ্যে মহাশীতকাল এবং ভলকানিক ইরাপশন তত্ত্ব খুবই জনপ্রিয়।

·         মহাশীতকাল তত্ত্ব

মহাশীতকাল তত্ত্বটি হলো নর্স পুরাণ বা উপকথার তত্ত্ব এবং এটি হলো একটি প্রাচীন তত্ত্ব । এ তত্ত্ব অনুসারে- “নর্স” নামে একদল নারী আছে, যারা নিয়তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাদের কেউ দেবতা থেকে আবার কেউ বামনদের থেকে এসেছে। যখন নর্সরা আদেশ জারি করবে, তখনই পৃথিবীতে মহাশীতকালের আগমন ঘটবে। অন্য যে কোনো শীতের চেয়ে এটি হবে আলাদা। সে সময় ঝড়ো বাতাস চারদিক থেকে তুষার নিয়ে আসবে। চিরকাল প্রখর তেজে দেখে আসা সূর্য ম্লান হয়ে যাবে, পৃথিবী নিমজ্জিত হবে অভূতপূর্ব ঠাণ্ডায়। তিন বছর জুড়ে বিস্তৃত এই শীতের মাঝে কোনো বিরতি থাকবে না। খাবার ও নিত্যকার দ্রব্যের জন্য মানুষ হন্যে হয়ে ছুটবে, দিশেহারা হয়ে পড়বে। সকল প্রকার আইন-কানুন ও নৈতিকতাবোধ ভেঙে পড়বে। কেবল চলবে টিকে থাকার সংগ্রাম। সেই টিকে থাকার সংগ্রামে মানুষ তার প্রিয় মানুষদের হত্যা করতেও পিছপা হবে না। এভাবে চলতে চলতে একদিন চূড়ান্তরূপে এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। [ridmik.news/article/]

·         ভলকানিক ইরাপশন বা আগ্নেয়গিরির আগ্নি-উৎপাত তত্ত্ব

ভলকানিক ইরাপশন বা আগ্নেয়গিরির আগ্নি উৎপাত তত্ত্বটি সমকালীন বা আধুনিক মতবাদ হিসেবে পরিচিত। এ তত্ত্ব অনুসারে- সারা পৃথিবীজুড়ে সুপ্ত ও জীবন্ত মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক আগ্নেয়গিরি আছে। ৫০০ টি আগ্নেয়গিরির মধ্যে আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ভলকানো সহ এমন ৪ টি সুপার আগ্নেয়গিরি আছে, যা চোখের পলকে পৃথিবীকে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই চারটের মধ্যে যে কোনো একটি জেগে উঠলে বা লাভা উদগীরণ করলে, তা প্রায় ২০০০ মিলিয়ন সালফিউরিক এসিড বের করার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে শুধু পৃথিবী নয়, ক্ষতি হবে সূর্যেরও। আগ্নেয়গিরির উৎপাতের কারণে যেভাবে ডায়নোসর ধ্বংস হয়েগেছে, তেমনি পৃথিবীও ধ্বংস হয়ে যাবে। [ridmik.news/article/]

এভাবে পৃথিবীর শেষ দিন সম্পর্কে একেক জন নিজস্ব খেয়াল-খুশী ও কল্পনা অনুসারে একেক রকম গল্প বানিয়ে প্রচার করেছে এবং নিজেদের অনুমানকে সঠিক বলে দাবী করেছে। ফলে প্রত্যেকে একে অপরের গল্প নিয়ে প্রচুর তর্কও করেছে। মানুষের এসব তর্ক-বিতর্ক প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

عَمَّ يَتَسَاءَلُونَ ‎﴿١﴾‏ عَنِ النَّبَإِ الْعَظِيمِ ‎﴿٢﴾‏ الَّذِي هُمْ فِيهِ مُخْتَلِفُونَ ‎

‘তারা পরষ্পরে (একে অপরের সাথে) কি নিয়ে তর্ক করছে? মহাসংবাদ প্রসঙ্গে? যে প্রসঙ্গে তারা (নিজেরাই) মতবিরোধে লিপ্ত রয়েছে? [সূরা নাবা, ৭৮: ১-৩]

প্রিয় দর্শক! আল-কুরআনের এ আয়াত থেকে বোঝা যায়- কিয়ামত বা পৃথিবীর ধ্বংস সম্পর্কে একটু আগে মানুষের বানানো যেসব তত্ত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর কোনোটা ই সঠিক নয়। বরং এ বিষয়ে কেবল আল্লাহ তায়ালা ই সঠিকভাবে বলতে পারেন। তাই আমরা আল-কুরআনের আলোকে পৃথিবীর শেষ দিন সম্পর্কীত তথ্যগুলো অর্থাৎ শেষ দিনের সূচনা, পৃথিবীর মধ্যস্থিত বস্তুসমূহ এবং পাহাড়-পর্বতের সংঘর্ষ, শিশুদের বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া এবং গর্ভবতীদের সন্তান প্রসব করে দেওয়ার মত ভীতিপ্রদ বিষয়গুলো বর্ণনা করতে চাই। তবে আল-কুরআনের বর্ণনাগুলো বোঝার সুবিধার্থে ভূমিকা স্বরূপ পৃথিবীর গঠনগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা প্রয়োজন।

·         পৃথিবীর গঠনগত বৈশিষ্ট্য 

আমাদের এই পৃথিবী প্রায় আটশ কোটি মানুষ, কোটি-কোটি উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আবাসস্থল। মহাকাশে কোটি কোটি গ্রহ আছে কিন্তু একটিতেও এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মত প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী নামের গ্রহটিকে নরম মাটি, খনিজ পদার্থ ও পর্বতমালার সমন্বয়ে মিহাদ অর্থাৎ বিছানা বা বিশ্রামের জায়গা করে সৃষ্টি করেছেন (সূরা নাবা, ৭৮: ৬)।

মিহাদ শব্দের অর্থ হলো বাচ্চাদের দোলনা। বাচ্চারা যেমন তাদের দোলনায় নিরাপদে থাকে, খেলা করে ও ঘুমায়, তেমনি পৃথিবীও মানুষের বিশ্রাম ও থাকার জন্য এক নিরাপদ জায়গা। পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গা নরম এবং সমতল। যেন মানুষ ঘরবাড়ি বানাতে পারে, চাষবাস করতে পারে, গবাদি পশু চরাতে পারে। মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যা কিছুই দরকার, তা হয় পৃথিবীর উপরিভাগে থাকে, না হয় একটু খুঁড়লেই পাওয়া যায়। শুধু তাই না, প্রযুক্তির উন্নতির জন্য যে সমস্ত কাঁচামাল দরকার, তা মানুষের নাগালের ভেতরেই খনির মধ্যে, পাহাড়ে অথবা সমুদ্রে রাখা আছে।

তাছাড়া পৃথিবীর ওপরিভাগের টেক্টনিক প্লেটের ক্রমাগত নড়াচড়া এবং সম্প্রসারণের ফলে যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য আল্লাহ তায়ালা এতে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। পর্বতমালা শুধু ওপরের দিকেই উঁচুই নয়, মাটির ভেতরেও এরা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। আমরা মাটির ওপরে পর্বতের যতটুকু দেখতে পাই, সেটা যতই বিশাল হোক না কেন, আসলে সেটা পর্বতের অল্প একটু অংশ। ভেতরে অনেক দূর পর্যন্ত পর্বতগুলো গেঁথে দেওয়া থাকে। একারণেই কুরআনে পর্বতমালাকে আওতাদ (أوتاد) অর্থাৎ খুঁটি বলা হয়েছে (সূরা নাবা, ৭৮: ৭)। কারণ এগুলো খুঁটির মতো মাটির গভীরে পোতা থাকে।

ফলে পৃথিবীর টেক্টনিক প্লেটের সম্প্রসারণ এবং নিজ অক্ষে প্রতি সেকেন্ডে ১২ কি. মি. গতির ঘুর্ণণ সত্ত্বেও পৃথিবীর মধ্যস্থিত বস্তুসমূহ স্থির থাকতে পারে এবং ছিটকে পড়ে যায় না।

·         যেভাবে হবে শেষ দিনের সূচনা

আল্লাহ তায়ালা সমতল ও নরম মাটি, ভূ-গর্ভস্থ খনিজ পদার্থ এবং অনড় ও স্থিরতার সমন্বয়ে পৃথিবীকে প্রাণের বিকাশের জন্য যথার্থরূপে তৈরি করেছেন এবং একে মানুষ, উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের যথার্থ আবাসস্থল বানিয়েছেন। ফলে মানুষ ও প্রাণীরা এখানে নিরাপদে বসবাস করে। কিন্তু যে দিন এ পৃথিবীতে বসবাসকারীদের মধ্যে আল্লাহর নাম নেওয়ার মত কেউ থাকবে না, দুনিয়ায় কোনো মুমিন অবশিষ্ট থাকবে না বরং দুনিয়াতে থাকবে শুধু নিকৃষ্ট লোকেরা। সেদিন এ পৃথিবীকে স্থির রাখার সময় শেষ হয়ে যাবে। উত্তেজনাময় ও রুদ্ধশ্বাস ফুটবল ম্যাচ চলাকালে ৯০ মিনিটের সময় হঠাৎ যেমন রেফারির বাঁশি বেজে উঠে, তেমনি পাপাচারের উত্তেজনায় নিমজ্জিত জীবনের ঘোরে হঠাৎ করেই শোনা যাবে শিঙ্গার ফুৎকার এবং এরই মাধ্যমে শেষ দিনের সূচনা হবে।

لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ

‘হঠাৎ করেই তা তোমাদের (ওপর) এসে পড়বে।’ [সূরা আ’রাফ, ৭: ১৮৭]

রাসুলল্লাহ সা. বলেন : অবশ্যই এ অবস্থায় কিয়ামত সংঘটিত হবে যে,

o   দুই ব্যক্তি বেচা-কেনার জন্য কাপড় খুলে রাখবে। কিন্তু মূল্য নিরুপন এবং কাপড় ভাজ করার আগেই কিয়ামত কায়েম হয়ে যাবে।

o   এক ব্যক্তি উটের দুধ দোহন করতে থাকবে। তবে তা পান করারও অবকাশ পাবে না। এর মধ্যেই কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।

o   এক ব্যক্তি নিজের পানির হাউজ লেপন করতে থাকবে কিন্তু তাতে চতুষ্পদ প্রানিকে পানি পান করানোরও সুযোগ পাবে না ।

o    এক ব্যক্তি মুখে লুকমা উঠাবে কিন্তু তা খাওয়ার আগেই কিয়ামত কায়েম হয়ে যাবে। [সহীহ বুখারী: ৬৫০৬ (ইফাবা: ৬০৬২)। সহীহ মুসলিম: ২৯৫৪]

এ হাদীসের মূল কথা হলো : আজকাল মানুষ যেভাবে দৈনন্দিন কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকে, তেমনি পৃথিবীর শেষ দিনও মানুষ স্বাভাবিক কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকবে। এমন অবস্থায় আকস্মিকভাবে হঠাৎ করেই শেষ দিনের সূচনা হবে।

·         পাহাড়-পর্বতের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি

আমরা জানি, এ পৃথিবী প্রচন্ড গতিতে ঘুরে চলেছে। বিজ্ঞানীদের হিসেব মতে পৃথিবী প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১২.২ কি:মি: গতিতে নিজ অক্ষে ঘুরে চলেছে। প্রচন্ড গতিতে চলন্ত কোনো বস্তু যখন হঠাৎ স্থির হয়ে যায়, তখন একটি বিপরীত ঘটনা ঘটে। গতি-তীব্রতার প্রতিঘাতের ফলে চলন্ত বস্তুর ভেতরকার স্থির বস্তুগুলোর মধ্যে প্রচন্ড বেগে ধাক্কা লাগে। প্রথম স্থির বস্তুটির গায়ে ধাক্কা লাগার ফলে এটি দ্বিতীয় স্থির বস্তুর গায়ে সজোরে আছড়ে পড়ে। এভাবে একে একে প্রত্যেক স্থির বস্তু অন্যটির ওপর সজোরে আঘাত হানে। যে বস্তুর আকার যত বড়, ওজন যত বেশি তার আঘাতের তীব্রতা এবং ধ্বংসের মাত্রাও তত বেশি।

সুতরাং যেহেতু ইসরাফিল আ. এর বাঁশি বাজানোর মাধ্যমে পৃথিবীর ঘুর্ণন বন্ধ হয়ে যাবে, তাই তখন প্রচন্ড গতিময় পৃথিবীটা হঠাৎ থমকে দাঁড়াবে এবং এর মধ্যকার পাহাড়-পর্বতসহ সকল স্থির বস্তু একটির ওপর অন্যটি ধাক্কা দিবে এবং এগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে। পাহাড়-পর্বত যেহেতু বিশাল ও অত্যন্ত ভারি, তাই এগুলোর সংঘর্ষ হবে অত্যন্ত তীব্র। তীব্র সংঘর্ষে মাটির গভীরে পোতা আওতাদ বা পেরেক তুল্য খুঁটি, একদা অটল-অনড় ও স্থির পর্বতমালার গোড়া মাটির গভীর থেকে উপড়ে যাবে এবং এগুলো সামনের দিকে চলতে শুরু করবে।

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا ‎

‘তারা আপনাকে পর্বতমালা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন- আমার রব এগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন।’ [সূরা তা হা, ২০: ১০৫]

وَ تَرَی الۡجِبَالَ تَحۡسَبُهَا جَامِدَۃً وَّ هِیَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ ؕ

‘তুমি পাহাড়সমূকে দেখছ এবং সেগুলোকে স্থির মনে করছ। অথচ তা মেঘমালার ন্যায় চলতে থাকবে। [সূরা নমল, ২৭: ৮৭]

সূরা তুরের ৯ ও ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘যেদিন আকাশ আন্দোলিত হবে প্রবলভাবে এবং পর্বতমালা দ্রুত চলতে থাকবে’ (সূরা তুর, ৫২: ৯-১০)। আকাশে যেমন হাল্কা মেঘমালা উড়ে উড়ে চলতে থাকে, সেদিন বিশাল ভারী পাহাড়-পর্বতগুলোও স্থানচ্যুত হয়ে হাল্কা  মেঘেদের মত চলতে থাকবে।

তীব্র সংঘর্ষের তোড়ে পাহাড়গুলো ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে যাবে এবং ধুলার মত উড়তে থাকবে।

يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيبًا مَّهِيلًا

‘সেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হয়ে উঠবে এবং পর্বতগুলো চলন্ত বালুর স্তুপে পরিণত হবে।’ [সূরা মুয্যাম্মিল, ৭৩: ১৪]

إِذَا رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا ‎﴿٤﴾‏ وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا ‎﴿٥﴾‏ فَكَانَتْ هَبَاءً مُّنبَثًّا

‘যে দিন পৃথিবীকে মারাত্মকভাবে ঝাঁকিয়ে দেওয়া হবে এবং পাহাড় গুড়ো হয়ে ধূলির মতো উড়তে থাকবে।’ [সূরা ওয়াকিয়াহ, ৫৬: ৪-৬]

فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ نَفْخَةٌ وَاحِدَةٌ ‎﴿١٣﴾‏ وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَاحِدَةً ‎﴿١٤﴾‏ فَيَوْمَئِذٍ وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ ‎

‘যখন শিংগায় একটিমাত্র ফুঁক দেওয়া হবে এবং যমীন ও পাহাড়কে তুলে এক আঘাতে ভেঙে দেওয়া হবে, তখন সে বিরাট ঘটনাটি ঘটে যাবে।’ [সূরা হাক্কাহ, ১৩: ১৫]

·         পৃথিবী অভ্যন্তরের বস্তুসমূহ বেরিয়ে যাবে

যখন পৃথিবীর খুঁটি পাহাড়গুলো স্থান চ্যুত হয়ে যাবে, তখন পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীগর্ভে বা পৃথিবীর অভ্যন্তরে যা কিছু থাকবে, তা তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যাবে। অর্থাৎ ঘটনার আকস্মিকতায় পৃথিবীর ভেতরের জিনিস বাহিরে এবং নিচের জিনিস ওপরে চলে আসবে।

إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا ‎﴿١﴾‏ وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا ‎﴿٢﴾‏ ‎

‘যখন পৃথিবীকে পুরোপুরি প্রকম্পিত করে দেওয়া হবে এবং সে তার পেটের বোঝা বের করে ছুড়ে ফেলে দেবে।’ [সূরা যালযালাহ, ৯৯: ১-২]

·         হতভম্ব মানুষের কিছু উন্মাদের মত কর্ম-কান্ড

শিঙ্গায় ফুক দেওয়ার পর যখন পৃথিবীজুড়ে একের পর এক অস্বাভাবিক ও অকল্পনীয় সব দুর্ঘটনা ঘটতে থাকবে, পাহাড় উৎপাটিত হয়ে ধুলার মত উড়তে থাকবে, ভেতরের জিনিস বাহিরে চলে আসবে, তখন মানুষ একেবারেই হতভম্ব হয়ে যাবে।

ঘটনার ভয়াবহতা দেখে দুষ্টুমিতে মেতে থাকা চঞ্চল শিশু বয়োবৃদ্ধের মত নির্বাক হয়ে যাবে। যে মা তার কলিজার টুকরা সন্তানকে দুধ পান করাচ্ছিলো, সে তাকে দুধ পান করানো বন্ধ করে দিবে। কোলের ছোট্ট শিশুর কান্না তাকে আর বিব্রত করতে পারবে না। অবুঝ শিশুর কান্নায় তার মাতৃত্ব আর কখনো উদ্বিগ্ন হবে না। গর্ভ ধারণের পর সন্তানের মুখ দেখার প্রতীক্ষায় থাকা নারী অকাল গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলবে।

فَكَيْفَ تَتَّقُونَ إِن كَفَرْتُمْ يَوْمًا يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيبًا ‎﴿١٧﴾‏ السَّمَاءُ مُنفَطِرٌ بِهِ ۚ كَانَ وَعْدُهُ مَفْعُولًا ‎

‘কীভাবে তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করবে, যদি সেদিনকে অস্বীকার করো, যা শিশুদেরকে বৃদ্ধ করে দেবে এবং যার (প্রচণ্ডতায়) আকাশ ফেটে চৌচির হয়ে যাবে? (অবশ্যই) তার অঙ্গীকার বাস্তবে পরিণত হবে।’ [সূরা মুয্যাম্মিল, ৭৩: ১৭-১৮]

یَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ کُلُّ مُرۡضِعَۃٍ عَمَّاۤ اَرۡضَعَتۡ وَ تَضَعُ کُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَ تَرَی النَّاسَ سُکٰرٰی وَ مَا هُمۡ بِسُکٰرٰی وَ لٰکِنَّ عَذَابَ اللّٰهِ شَدِیۡدٌ

‘যেদিন তোমরা তা দেখবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে। প্রত্যেক গর্ভধারিণী গর্ভপাত করে ফেলবে। তুমি তখন মানুষকে দেখে মাতাল ভাববে; অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন।’ [সূরা হজ্জ, ২২: ২]

সেদিন আর যা যা ঘটবে :

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন :

‎إِذَا السَّمَاءُ انفَطَرَتْ

‎وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ

‎وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ

যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,

যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,

যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে । সূরা ইনফিতার ১-৩

তিনি আরও বলেন :

‎إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ

‎وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ

‎وَإِذَا الْجِبَالُ سُيِّرَتْ

‎وَإِذَا الْعِشَارُ عُطِّلَتْ

যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে,

যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে,

যখন পর্বতমালা অপসারিত হবে,

যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে; সূরা তাকবীর ১-৪

·         যেভাবে সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে

শেষ দিনের ভয়াবহ কর্মকান্ড শুরু হয়ে গেলে যমীনের অধিবাসী ও মানুষের মধ্যে কঠিন ভয় ও মারাত্মক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে এবং তারা সম্পূর্ণভাবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে। পাপীষ্ঠ মানুষেরা যখন পৃথিবীর চূড়ান্ত ধ্বংস প্রত্যক্ষ করবে কিন্তু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না, তখন তারা অত্যন্ত হতাশ হয়ে যাবে।

যেমন আল কুরআনে এসেছে :

‎وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُونَ

যে দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে যাবে।

(সূরা রূম, ৩০: ১২)।

এ আতঙ্ক  ও হতাশায় শুধু যমীনবাসীরাই ভুগবে না বরং ঘটনার ঘনঘটা দেখে আসমানের অধিবাসীরাও ভয় পেয়ে যাবে।

وَ یَوۡمَ یُنۡفَخُ فِی الصُّوۡرِ فَفَزِعَ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا مَنۡ شَآءَ اللّٰهُ ؕ

‘যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন আসমানসমূহ ও যমীনে যারা আছে সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে; তবে আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ছাড়া।’ [সূরা নমল, ২৭: ৮৭]

আলোচ্য আয়াতে ফাযিআ’ (فَزِعَ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যর অর্থ হলো : অস্থির ও উদ্বিগ্ন হওয়া (ফাতহুল কাদীর)। আবার এ বিষয়ে সূরা যুমারে ফাযিআ’ শব্দের পরিবর্তে সা-ই’কা (صَعِقَ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে (সূরা যুমার, ৩৯: ৬৮), যার অর্থ হলো : অজ্ঞান হওয়া। উভয় আয়াত শিঙ্গার প্রথম ফুৎকারের সাথে সম্পর্কীত হিসেবে আয়াতদ্বয়ের সারমর্ম হলো : শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার পর প্রথমে সবাই অস্থির ও উদ্বিগ্ন হবে, এরপর অজ্ঞান হয়ে যাবে এবং অবশেষে বেঘোরে মারা পড়বে (তাফসীরে ইবন কাসীর)। অর্থাৎ পৃথিবীতে অবস্থিত সকল প্রাণী অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।

প্রিয় দর্শক! পৃথিবীর শেষ দিন তখকার জীবিত মানুষেরা দৈনন্দিন জীবনের মত নিজেদের কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকবে। কউ ঘুর্ণাক্ষরেও টের পাবে না যে, আজকেই কিয়ামত সংঘটিত হবে, আজই হলো পৃথবীর শেষ দিন। কেননা, তারা তখন পাপের উত্তেজনায় বুঁদ হয়ে থাকবে। আর এ অবস্থায় রেফারিরর বাঁশি বাজানোর মত শিঙ্গায় ফু দেওয়া হবে। ফু দেওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীর গতিময় ছুটে চলা বন্ধ হয়ে যাবে। তীব্র সংঘর্ষের কারণে সবকিছু ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে এবং চিরচেনা সুন্দর ও আরামপ্রদ এ পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর ও অস্বাভাবিক সব ঘটনা ঘটতে থাকবে। পাপাচারী মানুষেরা হতাশ হয়ে যাবে, কান্ডজ্ঞান হারিয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকবে এবং এক সময় অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।

অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে এ দিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বহু পূর্বেই বার বার সতর্ক করেছেন। কিন্তু মানুষ তখন এ দিনের অনিবার্যতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছে। ফলে আল্লাহ তায়ালাও আমল অনুসারে প্রতিদান দেওয়ার জন্য মানুষকে সুযোগ করে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে :

اِنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ اَکَادُ اُخۡفِیۡهَا لِتُجۡزٰی کُلُّ نَفۡسٍۭ بِمَا تَسۡعٰی

‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে; কিন্তু আমি (এর সময়) গোপন রাখতে চাই। যেন প্রত্যেককে নিজ প্রচেষ্টা অনুসারে প্রতিদান দেওয়া যায়।’ [সূরা তা হা, ২০: ১৫]

তাই পরিশেষে বলতে চাই, আল্লাহ রাব্বুল আলাীন আমাদের সকলকে পৃথিবীর শেষ দিনের ভয়াবহতা থেকে হিফাযত করুন এবং আমাদেরকে শেষ দিনের বিষয়ে তাঁর অঙ্গীকারের ওপর ঈমান আনার মাধ্যমে সৌভাগ্যবান ডানপন্থীদের কাতারে শামিল করুন!

More News Of This Category

আজকের সময় ও তারিখ

এখন সময়ঃ রাত ১২:৫৯

আজঃ বৃহস্পতিবার,

বর্ষাকাল

২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি


© All rights reserved © 2023 ISLAM AND LIFE
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ubaidullah

You cannot copy content of this page