1. islamandlifestudio@gmail.com : islamandlife :
  2. saif17rfl@gmail.com : Muhammad Saifullah : Muhammad Saifullah
ভিন গ্রহে এলিয়েন আছে কি? এ ব্যাপারে কি বলে আল-কুরআন ও বিজ্ঞান? - Islam and Life
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

ভিন গ্রহে এলিয়েন আছে কি? এ ব্যাপারে কি বলে আল-কুরআন ও বিজ্ঞান?

মুহাঃ উবায়দুল্লাহ
  • Update Time : শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

এই মহাবিশ্বে আমরাই কি একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী? পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও কি আমাদের কোনো প্রতিবেশী আছে? শত শত বছর ধরে মানুষ এমন প্রশ্ন করে আসছে এবং এ নিয়ে রয়েছে বিজ্ঞানীদের গবেষণা, প্রচলিত গল্প, কল্পকাহিনী, নানা ধারনা ও উদ্ভট সব তত্ত্ব।

প্রিয় দর্শক! আজকে আমরা পবিত্র কুরআনুল কারীম এবং আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে এলিয়েনের অস্তিত্ব নিয়ে জানার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন :

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِن دَابَّةٍ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ جَمْعِهِمْ إِذَا يَشَاءُ قَدِيرٌ

‘তাঁর সৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন হলো নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি যখন ইচ্ছা এগুলোকে একত্রিত করতে সক্ষম।’ [সূরা শূরা, ৪২: ২৯]

আলোচ্য আয়াতে সাত আসমান ও সাত যমীনের মধ্যে জীব-জন্তু ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার মানে হলো আমাদের পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহেও প্রাণী থাকার সম্ভাবনা আছে। অন্তত আল-কুরআনের এ আয়াতে তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ কারণে বিজ্ঞানীগণ ভিন গ্রহে এলিয়েন সন্ধান করে চলেছেন।

  • এলিয়েন (Alien) মানে কি?

এলিয়েন নিয়ে আলোচনার শুরুতে এলিয়েন মানে কি বা এলিয়েন বলতে কি বোঝায় তা জানা দরকার। অভিধানের ভাষায় এলিয়েন মানে হলো এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল (extraterrestrial) বা বহির্জাগতিক প্রাণ। অর্থাৎ এলিয়েন বলতে সে সব জীবদের বোঝানো হয়, যাদের উদ্ভব এই পৃথিবীতে হয়নি বরং পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও হয়েছে। [https://www.dictionary.com/browse/alien]

বিশ্বের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে বলে অনেক বিজ্ঞানী দাবি করেছেন। আবার এই দাবি নিয়ে অনেক বিতর্কও আছে। কারণ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে এই পর্যন্ত কোনো জীবাণু অথবা অতি হ্মুদ্র জীবাণু আছে বলে পরিষ্কার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবুও বিজ্ঞানীদের একটি বিরাট অংশ বিশ্বাস করেন যে, এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু উল্কাপিণ্ডতে অতি প্রাথমিক ক্ষুদ্র জীবাণুর ছাপের মত কিছু একটা দেখা গিয়েছে। [https://en.wikipedia.org/wiki/Extraterrestrial_life]  তাছাড়া পৃথিবীর আকাশে আনআইডেন্টিফাইড অবজেক্ট বা ইউএফও এর কারণেও মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও এলিয়েন আছে বলে মনে করা হয়।

আসলে সতের শতকের শুরুর দিকে যখন গ্যালিলিয় গ্যালিলী অত্যন্ত শক্তিশালী এক টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন, তখন থেকে মানুষের মধ্যে মহাকাশে কি আছে- সে নিয়ে কৌতূহল আরো বেশি বেড়ে যায়। খালি চোখে মহাকাশের তারা দেখার চেয়েও টেলিস্কোপে চোখ রাখা অনেক বেশি চমকপ্রদ হয়ে ওঠে। গ্যালিলিয়র টেলিস্কোপের কারণে মানুষ আজ চাঁদকে যেভাবে দেখতে পায়, আগে তা সম্ভব ছিল না। চাঁদের গায়ে যে কালো ছোপ দেখা যায়, সেসময় সেগুলো সামুদ্রিক পানি বলে মনে করা হতো এবং ল্যাটিন ভাষায় চাঁদের বুকের সেই সমুদ্রকে বলা হয়েছিলো লুনার মারিয়া বা চাঁদের সমুদ্র। তবে এখন বিজ্ঞানীরা জানেন যে চাঁদের বুকে যে কালো ছোপ দেখা যায় তা আসলে আগ্নেয় শিলা। সে যাই হোক, চাঁদের বুকে এলিয়েন পাওয়া না গেলেও মানুষের এলিয়েন খোঁজা কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি। বরং দার্শনিক ইম্যানুয়েল কান্ট থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেল সহ সদ্য প্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংও ছিলেন ভিনগ্রহে প্রাণের খোজে আগ্রহীদের মধ্যে অন্যতম। তবে প্রশ্ন হলো- ভিনগ্রহে এলিয়েন খোঁজার কোনো ক্লু আছে কি?

  • ভিনগ্রহে এলিয়েন থাকার ক্লু

মূলত ভিনগ্রহে এলিয়েন থাকার অন্যতম ক্লু হলো পানি এর অস্তিত্ব। অর্থাৎ আমাদের জানা মতে সমগ্র বিশ্বজগতে পৃথিবী ই একমাত্র গ্রহ, যাতে প্রাণী আছে। এটিকে প্রাণীর বসবাসের উপযোগী করার প্রধান উপাদান হলো পানি। কেননা, প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশের জন্য পানি অপরিহার্য। যেখানে পানি আছে সেখানে জীবনের জন্য অপরিহার্য উপাদান- যেমন: ডিএনএ ও প্রোটিনের পক্ষে পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণকে অস্তিত্বে আনা সম্ভব। পানির উপস্থিতিতে এই কাজটিই পৃথিবীতে সম্পন্ন  হয়েছে। অতএব জীবন সৃষ্টির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে এখন যা জানতে পারছেন, আল-কুরআনে সেটি বহু  শতাব্দী আগেই বলা হয়েছে:

وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

‘পানি হতেই আমি প্রতিটি প্রাণবান বস্তু সৃষ্টি করেছি, তারা কি ঈমান আনবে না?’ [সূরা আম্বিয়া, ২১: ৩০]

আল্লাহ তায়ালা যেহেতু পানি হতে প্রাণবান বস্তু সৃষ্টি করার কথা বলেছেন, তাই বিজ্ঞানীরা ভিনগ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান করতে গিয়ে সর্বপ্রথম পানি তালাশ করেন। অতএব, এলিয়েন খোঁজার প্রথম ধাপ হলো এমন কোনো গ্রহ খুঁজে বের করা যেখানে পানি আছে।

আমরা জানি, সৌরজগতে পৃথিবী ব্যতীত আরো সাতটি গ্রহ আছে : বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। আবার খালি চোখে রাতের আকাশে তাকিয়ে  আমরা বুঝতে পারি মহাজগতে হাজার হাজার নক্ষত্র রয়েছে। সূর্যের ন্যায় অন্য নক্ষত্রগুলোরও গ্রহ থাকবে- এমনটা ধরে নেওয়াই যায়। অতি সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সৌর জগতের বাইরে একটি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন, এটির নাম দেয়া হয়েছে প্রক্সিমা বি। সূর্যের  বাইরে পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টরাইকে কেন্দ্র করে ওই গ্রহটি প্রদক্ষিণ করছে। গ্রহটির ভর প্রায় পৃথিবীর ভরের সমান।

এখানে একটা বিষয় বলে রাখা দরকার যে, নক্ষত্রে প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে না, বরং প্রাণী থাকবে কেবল গ্রহে। আবার সকল গ্রহে প্রাণী থাকবে না। বহু গ্রহের পৃষ্ঠ গ্যাসীয় পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট। আবার কোনো কোনো গ্রহ নক্ষত্রের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে অত্যন্ত উষ্ণ। ফলে সেখানে প্রাণ ধারনের উপযোগী পরিবেশ নেই। আমাদের জানামতে কেবল পৃথিবীতেই প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। পৃথিবীর মত বা এর কাছাকাছি পরিবেশ থাকলে অন্য গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে গবেষণা করছেন, ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের অনুকূল পরিবেশ আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখাই তাদের গবেষণার লক্ষ্য এবং মার্কিন মহাকাশ সংস্থা “নাসা” এর এমনই একটি পরিকল্পনা ছিলো ২০২১ সাল নাগাদ মহাকাশে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হবে। এটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে জেডব্লিউএসটি নামে। যেটি পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে। ধারণা করা হচ্ছে, মহাকাশের কোনো নক্ষত্রের কোনো গ্রহে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ আছে কি-না, সেটি এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যাবে।

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একটি দল এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মহাবিশ্বে প্রাণ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তারা আশা করছেন, পৃথিবীর কাছাকাছি অন্য কোনো নক্ষত্রের অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, তা এভাবে খুঁজে বের করা যাবে। [https://www.bbc.com/bengali/news-45462878]

নাসার প্রকল্পটি এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং এত দিন পর এমন একটা ধারনা পাওয়া গেছে যে, সৌর জগতে যদি প্রাণের অস্তিত্ব থাকেই, তবে তাদের বাস সম্ভবত মঙ্গল গ্রহের মতো পৃথিবীর কাছের গ্রহে হবে না। বরং আরও দূরের চাঁদ, যেমন: ইউরোপা অথবা এনসেলাদাসে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইউরোপা বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে। আর এনসেলাদাস শনির একটি উপগ্রহ। এই দুটি চাঁদেই রয়েছে পুরু বরফে আচ্ছাদিত আবরণ। যার নিচে রয়েছে তরল সমুদ্র। ধারনা করা হয়, বরফের আবরণের নিচের অংশটি তরল থাকার কারণ হলো নিশ্চয়ই সেখানে কোনো ধরনের তাপের উৎস আছে।

পৃথিবীতে সমুদ্রের তলদেশে এক ধরনের তাপ নির্গমন হওয়ার ফাটল বা রন্ধ্র আছে। যার ফলে সেখানে এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। যা জলজ জীবের জন্য খাদ্য প্রস্তুতে সহায়তা করে। ইউরোপা অথবা এনসেলাদাস চাঁদেও হয়ত এই একই প্রক্রিয়া থাকতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এসব চাঁদে যদি প্রাণের অস্তিত্ব সত্যিই থাকে, তাহলে তারা দেখতে কেমন হবে সে নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া লেকের পানিতে যেভাবে বুদবুদ করে গ্যাস বের হয়, দূরের কোনো গ্রহে সেরকম পাওয়া গেলেই কি সেখানে প্রাণের উৎস পাওয়া যাবে?

  • কিভাবে দূরের গ্রহে টেলিস্কোপের মাধ্যমে এলিয়েন সনাক্ত করা যাবে?

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের মহাকাশ বিজ্ঞানী জোসুয়া ক্রিসানসেন-টোটন এবং তার দল বোঝার চেষ্টা করছেন যে, প্রাণের চিহ্ন আছে- কাছাকাছি থাকা কোনো নক্ষত্রের কোনো গ্রহে এমন কোনো নমুনা এই টেলিস্কোপটি সনাক্ত করতে পারে কি-না। ক্রিসানসেন-টোটন বলছেন : “জেডব্লিউএসটি” এর মাধ্যমে পরবর্তী কয়েক বছর ধরে আমরা এই প্রাণ সনাক্তকরণ পর্যবেক্ষণটি চালাতে পারবো।

কারণ এই টেলিস্কোপটি আলোর ক্ষেত্রে এতটাই সংবেদনশীল যে, গ্রহের আবহাওয়ার ভেতর রাসায়নিক কোনো নড়াচড়া থাকলে, এই দূরবীন সেটি সনাক্ত করতে পারবে। যেমন: পৃথিবীর আবহ মণ্ডলে বেশ কয়েকটি গ্যাসের আস্তরণ রয়েছে। এর অনেক কিছু পৃথিবীর প্রাণের কারণে তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন সেসব গ্রহে এরকম গ্যাসের সন্ধান করবেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর জীবনের কারণে পৃথিবীতে একরকম গ্যাসের আবহ রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে যদি সব প্রাণ বিলুপ্ত হয়ে যায়, পৃথিবীর আবহও পরিবর্তন হয়ে যাবে।

এতদিন ভাবা হতো, প্রাণের অস্তিত্ব হিসাবে অক্সিজেন বা ওজোন থাকতে হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে, সেখানে থাকা প্রাণের জীবন ধারণ আমাদের মতোই হবে। কিন্তু সেটা হয়তো নাও হতে পারে। এ কারণে এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আবহাওয়ায় রাসায়নিক অস্থিতিশীলতার ওপর, যেখানে নানা ধরণের গ্যাসের অস্তিত্ব থাকতে পারে এবং সেসব গ্যাস ওই গ্রহের জন্য কতটা স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করছে। এসব বিশ্লেষণ করে হয়তো ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান মিলতে পারে।

  • এলিয়েন খুঁজতে কোথায় বিশেষভাবে নজর দিতে হবে?

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে মি. ক্রিসানসেন-টোটন বলছেন, এই টেলিস্কোপ দিয়ে তারা প্রথমে নজর দিতে চান ট্রাপিস্ট-১ নামের একটি নক্ষত্রের দিকে, যেটা সূর্য থেকে ৩৯.৬ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে।

২০১৭ সালে এই নক্ষত্রটি বেশ আলোড়ন তৈরি করে। কারণ এটির পৃথিবীর মতো সাতটি গ্রহ রয়েছে এবং বেশ কয়েকটিতে তরল পানি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা প্রাণ থাকার জন্য বেশ আদর্শ।

এখন ওয়াশিংটনের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ওই নক্ষত্রের ট্রাপিস্ট-১ই নামের চতুর্থ গ্রহটির মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা এবং তার পরিবর্তনের কারণ বিশ্লেষণ করতে পারবে।

প্রাণ আসলেই আছে কি-না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এগুলো হয়তো খুবই ক্ষুদ্র নমুনা বা সংকেত হতে পারে। তবে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন লুনাইন বলছেন : তারা যে ক্ষেত্রটি বাছাই করেছেন, সেটি এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে সহজেই যাচাই করা যেতে পারে।

অনেক সময় অজৈব অনেক কারণ, যেমন: আগ্নেয়গিরির উৎক্ষেপণের কারণে গ্যাসের পরিবর্তন হয়ে থাকে। সুতরাং ওই গ্রহে প্রাণ আছে কি-না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার আগে এরকম অজৈব প্রভাবের বিষয়টিও বিজ্ঞানীদের মাথায় রাখতে হবে।

  • এলিয়েন খুঁজতে মিথেন গ্যাসের সন্ধান

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, ছায়াপথে পৃথিবীর মতো ৪০ বিলিয়ন গ্রহ থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বাইরে প্রায় চার হাজারের মতো গ্রহ সনাক্ত করেছেন, যাকে বলা হচ্ছে এক্সোপ্ল্যানেট। কিন্তু প্রশ্ন জাগে- এত বিপুল সংখ্যক গ্রহে কিভাবে প্রাণের উৎস খোঁজেন বিজ্ঞানীরা?

পৃথিবীতে যত জীবজন্তু রয়েছে তাদের সবার শরীর থেকে বর্ণ ও গন্ধহীন মিথেন গ্যাস নির্গমন হয়। ক্ষুদ্র উইপোকা থেকে শুরু করে বিশাল গরু- সকল জীবজন্তুর শরীর থেকেই মিথেন গ্যাস বের হয়।

বিজ্ঞানীরা মিথেন গ্যাস, অক্সিজেন, ওজোন ইত্যাদির মিশ্রণের উৎস সনাক্ত করার চেষ্টা করেন। তবে আগ্নেয়গিরি থেকেও মিথেন গ্যাস বের হয়। তাই তারা মনে করেন পৃথিবীর বাইরে প্রাণের উৎস থাকার সবচাইতে আদর্শ যায়গা হলো “এক্সোপ্ল্যানেট”। কারণ হল এর পরিবেশ। এক্সোপ্ল্যানেট নিজেদের নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে খুব বেশি দূরে নয় আবার খুব কাছেও নয়। তাই তাদের আবহাওয়া খুব বেশি গরমও নয় আবার খুব একটা ঠাণ্ডাও নয়। তাই এসব এক্সোপ্ল্যানেটেই প্রাণের উৎস থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞানী। অতএব এখানেই আপাতত বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা। [https://www.bbc.com/bengali/news-45462878]

প্রিয় দর্শক! নাসা যেভাবে মহাকাশে এলিয়েন খোঁজার মিশনে নেমেছে, সেখানে তারা কিন্তু একক কোনো অনুসন্ধানী দল নয়। বরং ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার এ তীব্র আকাঙ্খার জগতে আরো কিছু দলও আছে, যারা এলিয়েন খুঁজে পেতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।

হাওয়াই এবং চিলির ভূমিতে থাকা টেলিস্কোপ দিয়েও এ ধরণের পর্যবেক্ষণ চালানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির অ্যারিয়েল মিশনও অন্য নক্ষত্রগুলোর গ্রহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে, যা ২০২০ সাল নাগাদ উক্ষেপন করা হয়েছে। তাছাড়া জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি নাসার নেতৃত্বে তৈরি করা হলেও এর সঙ্গে ইউরোপিয়ান এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সিও রয়েছে। তাই বলা চলা বিজ্ঞান ও গবেষণায় এগিয়ে থাকা সবগুলো শক্তিই আজ মহাবিশে^ এলিয়েন খুঁজে পেতে মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে। হয়ত সে দিন বেশি দূরে নয়, যে দিন পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূত্র ধরে আবিষ্কৃত হবে মানুষের মত নতুন কোনো বুদ্ধিমান প্রাণি- নতুন কোনো গ্রহে, নতুন কোনো সৌর মন্ডলে।

পরিশেষে পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূত্র ধরে বলতে চাই- প্রতিটি আবিষ্কারের একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন :

لِّكُلِّ نَبَإٍ مُّسْتَقَرٌّ ۚ وَسَوْفَ تَعْلَمُونَ

‘প্রত্যেক খবরের একটি সময় নির্দিষ্ট রয়েছে এবং অচিরেই তোমরা তা জেনে যাবে।’ [সূরা আনআম, ৬: ৬৭]

অতএব আমরা এলিয়েন সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানার জন্য নিয়মিত গবেষণার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে চাই। যেন আমরা আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত দেখে তাঁর ওপর পরিপূর্ণরূপে ঈমান আনতে পারি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে সেই তাওফিক দান করুন, আমীন!

More News Of This Category

আজকের সময় ও তারিখ

এখন সময়ঃ রাত ১০:২৩

আজঃ বুধবার,

বর্ষাকাল

১৯ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি


© All rights reserved © 2023 ISLAM AND LIFE
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ubaidullah

You cannot copy content of this page